August 21, 2025

বি ধা তা র  খে লা – নি ষ্ঠু র  চা স না লা

সঞ্জীব মুখার্জি

 

বিপর্যয় বিপর্যয়, কাজ কি তোমার শুধুই ক্ষয়?

মায়াহীন তুমি স্নেহহীন তুমি এতই যে তুমি নির্দয়।।

যেখানেই তুমি আসো না কেন রূপ তো তোমার এক

জলই হোক আর স্থলই হোক বিনাশ করো যে অনেক।।

বিধাতার ডাকে হেনেছিলে তুমি আঘাত সে সর্বনাশা

কেড়েছিলে তুমি শত শত প্রাণ এমনই সর্বগ্রাসা।।

ভুলতে যে পারেনাকো মন আজো দেয় তাহা নাড়া

এমনই এক কথা শোনাব বলে দিয়েছি তোমায় সাড়া।।

 

ধানবাদের নিকটে এক প্রত্যন্ত গ্রাম

দামোদর তীরে বসা “চাসনালা” তার নাম।।

বিহারের অংশ বলে জানিতাম যারে

ঝাড়খণ্ডের অঙ্গ বলে কয় এখন তারে।।

আঁকা বাঁকা পথ সেথা নেই গাড়ি ঘোড়া

রূপকথার শহর সে নয় ঝোপঝাড়ে মোড়া।।

ডাম্পারের আনাগোনায় কয়লার পরিবহন

কৃষ্ণবর্ণের ধূলো সেথা উড়িতো সর্বক্ষণ।।

জানিত কদাপি কেহ সেই গ্রামের কথা

ফাটিয়া চৌচির বুক শুনিয়া তার মর্মব্যথা।।

বর্ণিব আজ আমি সে বেদনার উপাখ্যান

বিচলিত হবে জেনে সকলের মন প্রাণ।।

 

আয়তনে হবে প্রায় নয় শত একরের চাসনালা

মাটির তলায় নাকি থাকিত সেথা উৎকৃষ্ট কয়লা।।

যার প্রভুত্বে ছিল সেথা কয়লা খননের কাম

ইন্ডিয়ান আইরন এন্ড ষ্টীল কোম্পানী তার নাম।।

প্রতিদিন উঠিত সেথা কয়লা টনে টনে।।

ভরিয়া থাকিত তাহা শ্রমিক হাজার জনে।।

মজদুরী পেয়ে যাদের কাটতো যে জীবন

আনন্দে আর খুশিতে ভরা থাকতো প্রাণমন।।

চাসনালা খনি নাকি অত্যাধুনিকতায় গড়া

জমবে না গ্যাস সেথা বায়ুরন্ধ্রে ভরা।।

দিন যায় মাস যায় বছরও যে হয় পার

হঠাৎ কেন হলো জানি দুর্ঘটনা সে দুর্নিবার।।

 

উনিশশোর পঁচাত্তর আর ডিসেম্বরের সাতাশ

দুপুর দেড়টা তখন শীতের খোলা আকাশ।।

ভূগর্ভে হইলো হেথা ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরণ

কে জানিত হবে তাহা অশুভ কোনো ক্ষণ।।

কেঁপে ওঠে ভূমি তার দোলে ধরাতল

বিহগেরা গাছ ত্যাগে আর করে কোলাহল।।

কি হয়েছে? কি হয়েছে? প্রশ্ন সর্বমুখে

আতঙ্কিত বড় তারা ভয় যে ছিল চোখে।।

ধসে গেছে কয়লার ছাদ গেলো যে তাহা জানা

আশিফুট ছাদটি পুরু খননেও ছিল মানা।।

পরিত্যক্ত ছিল যে বুঝি পাশেরও খাদান

হইতো না কদাপি সেথা কয়লার উত্থান।।

 

ভরে ছিল সলিলে তাহা পরিমান সুবিশাল

গ্যালন হবে যাহা শত মিলিয়ন ইম্পেরিয়াল।।

ছাদ ভেঙ্গে সেই জল আসে বেগে ধেয়ে

ভরে যায় খনি খানি প্রতিটি সুড়ঙ্গ বেয়ে।।

তীব্র জলোচ্ছাসে হয় প্লাবিত ভিতর

ধীরে ধীরে বেড়ে যায় তার জলস্তর।।

মাটি আর কয়লা সেথা আলগা ছিল যত

ভাসায়ে লইয়া তারে আর শ্রমিকও শত শত।।

নীচের খবর যাহা আসতে দেরী তাহার

ছড়ায়ে পড়িল দেখি মুহূর্তে দুর্বার।।

বেজে যাওয়া হুটারের বিপদের অ্যালার্ম

চারিদিকে ছুটোছুটি নেই কারো বিরাম।।

 

অ্যাম্বুলেন্সের আনাগোনা সাইরেনের বাজন

দমকলেরাও ছুটিয়ে গাড়ি করিতে জলশমন।।

পাইপে কেউ দেয় টান কেউ বা ধরে দড়ি

জনারণ্যে ভরা সেথায় স্ট্রেচারের ছড়াছড়ি।।

অবিলম্বে শুরু হয় পরিত্রানের কাজ

পড়ে যায় চতুর্দিকে রব তার সাজ সাজ।।

কপিকল অনর্গল খায় শুধুই পাক

ব্যস্ত সে আর্তদের বাঁচানোরই ডাক।।

যতবার উঠে আসে লিফ্ট শ্রমিকবাহী

বিচলনে উদ্বেগে করে ত্রাহী ত্রাহী।।

কেহ বা জীবিত ছিল কেহ শবদেহ

পরিবার উদগ্রীব তাদেরই যদি কেহ।।

 

সত্বর জীবিতদের পাঠায় হাসপাতালে

অন্যদিকে মৃতদের সনাক্তের কাজ চলে।।

দিবানিশি চলে নাকি হৃতদের অন্বেষণ

নেমেছিল সেদিন যারা করিতে কয়লা খনন।।

খুঁড়ে খুঁড়ে দেখে মাটি বের হয় শব

উপরে আনিলে তাহা দেখে সব নীরব।।

জল খাওয়া দেহগুলি ফুলে জয় ঢাক

এসেছিলো যাহাদের মরণের ডাক।।

কার দেহ আর কেই বা ছিল চেনা তারে বড় দায়

কি করিয়া জানিবে তারা প্রাণ হারাবে হায়।।

সেই কি ছিল শেষ দেখাটি ফিরবে না আর ঘরে

খাবে না ভাত বলবে না কথা ডাকবে না নাম ধরে।।

 

ক্রমাগত ভাবে বেড়েই যে চলে মৃতদের গণনা

মায়েদের কোল খালি হয় আর স্বামীহারা হয় ললনা।।

কত সন্তান বাপহারা হয় ছিল নাহি তাহা জানা

সংসার তাই ভেসে যায় হায় অসীম সে বেদনা।।

হাহাকারে তার মুখরিত হয় আকাশ বাতাস জমি

অশ্রু সেথায় মানেনা যে বাধ সিক্ত করে সে ভূমি।।

সপ্তাহ ধরে খোঁজাখুঁজি চলে খাদানের সুগভীরে

তুলে ফেলা হয় রাশি রাশি জল বিদেশী যন্ত্র করে।।

পরিসংখ্যান সেথা মৃতদের কথা বলে যে অদ্যাবধি

প্রায় চারশত প্রাণ নাকি পায় সলিলের সমাধি।।

ভুল ছিল কার আর প্রাণ দিল কেউ চলিল লম্বা বিচার

জেল হলো কারো জরিমানা দিয়ে কেউ পেয়ে গেলো ছাড়।।

সরকার হতে আসিল আদেশ বন্ধ হইলো খনন

আজও গেলে সেথা পাইবে শুনিতে অতৃপ্তের ক্রন্দন।।

ঘটনা যে বড় হৃদয় বিদারী পৃথিবীর বিপর্যয়

ভুলিতে কি পারি স্মরণেতে ধরি তাই মোরা সবাই।।

1 thought on “বি ধা তা র  খে লা – নি ষ্ঠু র  চা স না লা

  1. প্রথম তোমার লেখা পড়লাম। খুব ভালো লিখ । তুমি অনেক যুক্তি ও বিবরণ নুতন ভাবের লেহ পড়লাম প্রায়ই সনেটের মনে হচ্ছে। আমি ঠিক জানি না। আরো লেখো ও আমাকে ও পাঠাও

Leave a Reply to Mk Banerjee Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *