August 21, 2025

মসির ধারায় অসির ধার (২৬)

 সঞ্জীব মুখার্জী 

 

“If a death strikes before I prove my blood, I promise, I will kill death.” 

 – Captain Manoj Pandey, Param Vir Chakra

সময়টা ১৯৯৪ সনের আগস্ট মাসের ঠিক মাঝামাঝি করে। শিলিগুড়ির নিকটস্থ সেবকের জঙ্গলে স্টেজিং ক্যাম্পে দিন সাতেক কাটিয়ে সেখানে জংলী হাতীর পাল দ্বারা মধ্য রাত্রিতে আক্রান্ত হয়ে তাদের সাথে সংঘর্ষ পূর্ণ এক রাত্রি অতিবাহিত করার পর পাগলা হাতীর দলটিকে ক্ষয়ক্ষতিহীনভাবে পরাস্ত করে এক অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়ের মুখ থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের গন্তব্য স্থল “কুপুপের” উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে গেলে আরো দুটো আভ্যন্তরীন ‘স্টেজিং ক্যাম্প’ অতিক্রম করেই যেতে হবে। সেবকের স্টেজিং ক্যাম্পটি ছিল প্রথম, দ্বিতীয় টি হলো রংপো তে, আর তৃতীয় এবং শেষ টি হলো জুলুকে। তবে জুলুকের স্টেজিং ক্যাম্পটিকে শুধুমাত্র স্টেজিং ক্যাম্প না বলে ‘স্টেজিং-কাম-এক্লিমেটাইজেসন ক্যাম্প’ বলাটাই ঠিক হবে আর তার একটি বিশেষ কারণ ও আছে আর একটি বিশেষ উদেশ্য ও আছে।  তবে সে কথায় আমি পরে আসছি। সকাল বেলায় আমাদের ব্যাটালিয়নের কনভয় শিলিগুড়ির সেবক স্টেজিং ক্যাম্প থেকে চা সহযোগে প্রাতরাশ সেরে নিয়ে মার্চ করে যখন দ্বিতীয় স্টেজিং ক্যাম্পে অর্থাৎ রংপো তে আমাদের কনভয় পৌঁছলো তখন ঠিক দুপুর গড়িয়ে গেছে। সেবক থেকে রংপো অব্দি আমাদের কনভয়ের যাত্রাপথের ভৌগোলিক পরিস্থিতি একটু অনিয়মিত। যদিও সেটি একটি জাতীয় সড়ক, NH-১০-এর নাম পরিচিত কিন্তু তবু সেটি অনিয়মিত এক ভৌগোলিক অবস্থিতির মধ্যে দিয়েই তার অবগমন। অনিয়মিত ভৌগোলিক পরিস্থিতি এই কারণে বলছি যেহেতু যাত্রাপথের কোনো অংশ অমসৃণ আবার কোনো অংশ মসৃণ, কোনো অংশ নির্মাণাধীন আবার কোনো অংশে মেরামতির কাজ চলছে, কোথাও সমতল আবার কোথাও ছোট ছোট ঘন জঙ্গলে ভর্তি পাহাড়, কোথাও চওড়া রাস্তা আবার কোথাও সংকীর্ণ রাস্তা, কোথাও পাহাড়ে চড়াই আবার কোথাও উৎরাই। যাইহোক, এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের কনভয় ধীরে ধীরে সন্তর্পনে নির্বিঘ্নে রংপো স্টেজিং ক্যাম্পে পৌঁছলো। সেবক থেকে চলার আগে ভোর থেকে আমাদের লাঞ্চের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী রান্নাবান্না করে নেওয়া হয়ে ছিল এবং কনভয়ের একটি নির্দিষ্ট গাড়িতে শুধুমাত্র লাঞ্চের সরঞ্জাম রাখা হয়েছিল।  এটা তো আগে থেকেই ঠিক ছিল যে লাঞ্চ আমাদের সেবক এবং রংপোর মধ্যবর্তী কোনো একটি স্থানেই করতে হবে। দুপুর হবার আগে আমাদের কনভয় পৌঁছলো একটি জায়গায় যেটি হলো পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম এর অন্তর্বর্তী স্টেট বর্ডারে অর্থাৎ রাজ্য সীমান্তে যে জায়গাটির নাম রংপো এবং সেখান থেকে আমাদের ঠিক স্টেজিং ক্যাম্পের স্থলটি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। রংপোতে রাজ্য সীমান্তের জায়গাটি যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং সিকিম পুলিশ বাহিনীর প্রহরাধীন। সেখানে যখন আমাদের কনভয় পৌঁছলো তখন লাঞ্চ করার সময় হয়ে গিয়েছে। যাত্রাপথের কোনো একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা দেখে এক ঘন্টার জন্য আমাদের কনভয় হল্ট করে এবং সেখানেই আমরা লাঞ্চ সেরে নিই। আমাদের লাঞ্চ চলাকালীন উভয় রাজ্যের পুলিশের লোকেরাও আমাদের যথাযথ ভাবে পানীয় জল, চেয়ার টেবিল, ইত্যাদি বন্দোবস্ত করে সাহায্য করেন। যদিও আমাদের কনভয়ে সবকিছু নিয়েই আমরা চলি কিন্তু তবুও তাঁদের সেই সাহায্য আমাদের কাছে একটি বরদানের থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। দুই রাজ্যের রাজ্য পুলিশ বাহিনীর আমাদের প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহারে অত্যন্ত হর্ষিত হয়ে আমরা তাঁদেরও আমাদের সাথে লাঞ্চ করতে অনুরোধ করি।  কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাঁরা আমাদের জানান যে তাঁদের কাছে রোজকার নিয়মানুযায়ী লাঞ্চের বন্দোবস্ত করাই আছে। যেখানে আমরা লাঞ্চ করি সেখানটা এতো সুন্দর ছিল যে লাঞ্চ করতে করতে আমাদের সকলের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ বনভোজনের অর্থাৎ পিকনিকের অনুভূতির সঞ্চার হচ্ছিলো। এনতার লুচি, আলুর দম, নোনতা পোলাও, পুরু ডাল, মাংসের ঝোল, যারা মাংস খায় না তাদের জন্য ডিমের কারী, স্যালাড এবং ভোজন উপরান্তে মিষ্টান্ন সহযোগে লাঞ্চ সেরে নেওয়ার পর সেখান থেকে রওনা দেওয়ার পূর্বে দুই রাজ্যের পুলিশ বাহিনী একত্রিত হয়ে আমাদের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনা করে ‘ভারত-চীন’ আন্তর্জাতিক সীমান্তে আমাদের একটি সাফল্যমন্ডিত এবং গৌরবমন্ডিত অধ্যায়ের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা বার্তার সাথে আমাদের বিদায় সম্ভাষণ জানান। আমরাও সেখান থেকে ‘বন্দে মাতরম’ আর ‘জয় হিন্দ’-এর উল্লাস ধ্বনির সঙ্গে সেখান থেকে প্রস্থান করি। রংপোর রাজ্য সীমান্ত থেকে পাহাড়ের উপত্যকা বেয়ে আরো বেশ কিছুটা রাস্তা চলার পর বিকাল হবার কিছুক্ষণ আগেই আমাদের কনভয় রংপোতে আমাদের স্টেজিং ক্যাম্পের সাইটে পৌঁছে যায়।

রংপোতে স্টেজিং ক্যাম্পের সাইটে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ব্যাটালিয়নের বিভাগীয় দায়ীত্ব প্রদত্ত সৈনিকরা স্টেজিং ক্যাম্প স্থাপনের জন্য যে যার কাজে লেগে যায়।  রংপোর স্টেজিং ক্যাম্পে আমাদের দিন পাঁচেক বাধ্যতামূলক ভাবে কাটাতে হবে আর তারপর সেখান থেকে আমাদের কনভয় ধীরে ধীরে পাকদন্ডী রাস্তা বেয়ে পর্বতে আরোহন করবে।  রংপোর স্টেজিং ক্যাম্পে প্রথম রাত্রিটা ক্যাম্প সেটিং এর কাজে অতিবাহিত হলো।  ঠিক হলো পরদিন ঠিক সক্কাল বেলায় শুরু সেবক থেকে আসার পথে কোথাও সমতল এবং পাহাড়ী রাস্তা পড়লেও রংপো জায়গাটি একেবারে একটি সমতলে অবস্থিত এবং পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত।  এককথায় জায়গাটিকে উপত্যকা বললে ঠিক বলা হয়।

রংপো পৌঁছনোর পর বুঝতে পারলাম যে জায়গাটি অত্যন্ত মনোরম।  আবহাওয়ার দিক থেকেও বটে এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও বটে।  যেদিকে ই তাকাই সেদিকেই দেখতে পাই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য।  কাছে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কিছু ঘন বসতি।  দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে দুরন্ত বেগে অবিরাম ঝরে পড়া দুগ্ধবৎ শ্বেত এবং শুভ্র জলপ্রপাত যে কারোরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।  স্টেজিং ক্যাম্পের চারিদিকটা ছোট ছোট ঝোপঝাড় পূর্ণ জঙ্গলে ঘেরা।  ক্যাম্পের ঠিক পাশটিতে রয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বিভাগের একটি বড়ো আকারের “গ্রিড সাব স্টেশন” যার চারিপার্শ্বে উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট হ্যালোজেন লাইটের চোখ ঝলসানো আলো।  আর তারই দৌলতে আমাদের ক্যাম্পের এলাকাটা রাত্রির অন্ধকার ভেদ করে আলোয় আলোকিত।  ক্যাম্পের অন্য একপাশে পাথরের বুক চিরে কুলু কুলু শব্দ করে বয়ে চলা ছোট্ট নদীটি যেন আমাদের ক্যাম্পের নৈসর্গিক গুরুত্বে এক নতুন দিগন্তের সংযোজন ঘটায়।

ক্যাম্প থেকে তাকালে দূরে দেখতে পাওয়া যায় পাহাড়ের গা কেটে কেটে ধাপ চাষের সংস্কৃতি।  তাদের কোনো জমিতে ধান, কোনো জমিতে গম আবার কোনো জমিতে রকমারি তরিতরকারীর চাষ।  তবে চাষের কথা বলতে গেলে রংপোর মুখ্য আকর্ষণ হলো বড় এলাচের চাষ।  রংপো জায়গাটি পাহাড়ের পাদদেশে এবং একটি সমতল ভূমিতে অবস্থিত হওয়ার জন্য সেখানটি বড় এলাচের চাষের অত্যন্ত অনুকূল ফলতঃ সেখানে প্রচুর পরিমানে বড় এলাচের চাষ হয়।  বড় এলাচের চাষের এতই প্রাচুর্য যে নির্দিষ্ট চাষ জমি তে বড় এলাচের গাছের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পের আশেপাশে, বসতির আনাচে কানাচে প্রচুর বড় এলাচের গাছ।  বড় এলাচের গাছের পাতাগুলি দেখতে অনেকটা ঠিক কলাবতী ফুলগাছের পাতার মতো দেখতে।  প্রথম প্রথম আমরা গাছগুলিকে দেখে সনাক্তই করতে পারিনি যে সেগুলি বড় এলাচের গাছ অবশ্য সেটা অভিজ্ঞতার অভাবেই।  পরে জানতে পারলাম যে সেগুলি সব বড় এলাচের গাছ।  গাছগুলির যেগুলিতে ফুল ফুটে রয়েছে তার চারপাশটা এলাচ ফুলের মনমাতানো সুগন্ধে সুগন্ধিত।  সেখানকার স্থানীয় লোকজন খুবই শান্ত শিষ্ট এবং মিষ্টভাষী আর সব চাইতে বড় কথা হলো তারা খুব লাজুক প্রকৃতির।  আমাদেরকে দেখলেই সেখানথেকে হয় পালাতো নয় নিজের ঘরে ঢুকে যেত।  সেখানে দুদিন থাকার পর পাশের গ্রিড সাব স্টেশনের দু একজনের সাথে আলাপ হলে জানতে পারলাম যে বড় এলাচ গাছগুলি এবং তাদের ফুলের সুগন্ধ মনমোহক হলেও প্রতিটি গাছের মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি বিপদজনক বস্তু বা প্রাণী আর সেটা হলো “জোঁক” যাকে বলে রক্ত চোষা জোঁক আর তাই সেই লোকগুলি আমাদের সেব্যাপারে সাবধান করে দেন যে আমরা যেন কোনো ভাবেই আকৃষ্ট হয়ে এলাচ ফুল না তুলি বা গাছগুলিকে নাড়ানাড়ি না করি।  কোনোভাবে জোঁক আমাদের শরীরের কোনো জায়গায় লেগে গেলে যতক্ষণ না পেটভরে রক্ত খাবে ততক্ষন ছাড়বে না।  তারা আমাদের সাবধান করার সাথে সাথে বলে দেন যে আমরা যেন পকেটে সবসময় লবন অথবা দিয়াশলাই রাখি এবং যদি কখনো অতর্কিতে জোঁক লেগে যায় তাহলে তার উপর লবন ছড়িয়ে দিই তাহলে জোঁকের থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।  কৌতূহল বশতঃ তাদের কে আমরা যখন জিজ্ঞেস করলাম যে তারা জোঁকের হাত থেকে নিষ্কৃতি পায় কেমন করে।  উত্তরে সগর্বে তারা বলে যে তারা সেখানকার স্থানীয় তাই তাদেরকে জোঁকেদের সঙ্গে নিয়েই জীবন কাটাতে হয়।  তাদের কাছে প্রাণীটি যেন গা সওয়া হয়ে গেছে।   আমাদের কাছে যেমন মশা মাছি তাদের কাছে জোঁক টা ঠিক তেমনই তাই তাদের ভয়ডর লাগে না।  তাদের মুখ থেকে আর একটা কথা শুনে আমরা যেমন আশ্চর্য হলাম তেমন আমাদের গাটাও ঘৃনায় ঘিনঘিন করে উঠলো।  তারা নাকি তাদের শরীরের কোথাও ঘা ফোট হলে হাতে করে জোঁক কে ধরে সেই ঘায়ের উপর বসিয়ে দেয় আর জোঁক সেই ঘায়ের দূষিত রক্ত শোষণ করে নেয় আর ঘা নাকি তাড়াতাড়ি সেরে উঠে।  এটাকে সেখানকার ভাষায় বলা হয় “লীচ থেরাপি” অর্থাৎ জোঁক চিকিৎসা।  তবে সেখানকার লোকগুলোকে আমরাও গর্বের সঙ্গে জানিয়ে রাখলাম যে আমরা ভারতীয় সৈনিক এবং আমাদের কোনো কিছুকেই ভয় পেতে নেই, ভয়ের সাথে আমাদের পরিচিতিও নেই এবং আমাদের জীবনে ভয় বস্তুটির কোনো অস্তিত্বও নেই তা সে জোঁকই হোক আর কোনো বন্যপশুই হোক অথবা অন্য দেশের কোনো শত্রুসৈন্যই হোক আর এটাই আমাদের রীতিনীতি।  তবে হ্যাঁ, আমরা বিপদকে ভয় পাইনা বটে কিন্তু বিপদকে এড়িয়ে যাওয়াটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য আর বিপদের মুখোমুখি হয়ে বিপদকে নাস্তানাবুদ করা আমাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য এবং সেটি  আমাদের কাছে একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ কেননা বিপদের সম্মুখীন হতে গেলে অস্ত্র ওঠাতেই হবে আর তাতে ক্ষয়ক্ষতি অনিবার্য।  তাই কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য বিপদ এড়িয়ে চলার চেষ্টাকেই আমরা প্রাথমিকতা দিই।  আমাদের মুখনিঃসৃত কথাগুলো শোনার পর স্থানীয় লোকগুলি সহাস্যে এবং সলজ্জ ভাবে মাথা নেড়ে আমাদের কথায় সায় দেয়  আর সেই সঙ্গে দেশের সেনাবাহিনীর উপর তাঁদের অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থার কথা তাঁরা আমাদের কে মৌখিক আর শারীরিক ভাষায় জানিয়ে দেন।  যাইহোক, একটা কথা আমি অস্বীকার করতে পারছিনা যে এতো সবকিছুর মধ্যেও  রংপোতে স্টেজিং ক্যাম্পে চার পাঁচ টি দিন থাকাকালীন আমাদের সৈনিকদের অনেককেই অজান্তে জোঁকেদের রক্তদান করে এবং রক্তপান করিয়ে আসতে হয়।  যদিও সৈনিক জীবনে এইধরণের ছোটোখাটো ব্যাপার একটা অংশই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাই এগুলোকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করে দিতাম।

রংপো স্টেজিং ক্যাম্পে চার পাঁচ দিন অতিবাহিত করার পর ১৭ই আগস্ট ১৯৯৪ তারিখের সন্ধ্যা বেলায় আমাদের ব্যাটালিয়নের সকল সৈন্যদের একত্রিত করে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার কর্নেল শেরগিল আমাদের সম্মুখীন হয়ে আমাদের সকলকে বার্তা দিলেন যে তার পরদিন ঠিক সকাল ৭ টায় আমাদের কনভয় রওনা দেবে জুলুক স্টেজিং-কাম-এক্লিমেটাইজেসন ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে।  তিনি এটাও বললেন যে এর পরবর্তী রাস্তা পর্বতীয় ভূখণ্ডে এবং খুব বিপদসংকুল তাই আমাদের খুব সতর্ক এবং সাবধান হয়ে চলতে হবে।  অনুশাসন এবং নিয়মানুবর্তীতার প্রতি সকলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন যে কনভয় চলাকালীন কোনো গাড়ি একে অপর কে ওভারটাকে করবে না এবং যাত্রা শুরুর সময় যে ক্রমে থাকবে সেই ক্রম যেন যাত্রাপথে কোনোভাবেই ভঙ্গ না হয়।  তারপর তিনি সমাবেশ কে বিসর্জন অর্থাৎ dispersal এর নির্দেশ দেন এবং বলেন যে আমরা সকলে তাড়াতাড়ি নৈশ ভোজন সেরে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।  প্রবল উত্তেজনায় আমার মন তখন আলোড়িত এবং অশান্ত।  নতুন জায়গার মধ্যে দিয়ে যাবো, নতুন জায়গা দেখবো, নতুন অভিজ্ঞতা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।  সবাই খেয়েদেয়ে নিজের নিজের বিছানায় তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম।  কোনোরকমে রাত পোহালো।  সকাল বেলায় লুচি তরকারি এবং চা সহযোগে প্রাতরাশ সেরে নিয়ে তৈরি হয়ে গ্রাউন্ডে একত্রিত হলাম।  আমাদের কনভয় ও সেখান থেকে আমাদের সকলকে নিয়ে মার্চ করার জন্য পুরোদস্তুর রেডি।  শুধু যাত্রা শুরু করার জন্য একটি হুইসেলের ইশারার অপেক্ষা।   আমাদের লাগেজ পত্র অন্য একটি লাগেজের গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরা যে যার নির্দিষ্ট গাড়িতে গিয়ে বসলাম।  কর্নেল শেরগিলের নির্দেশ মাফিক হুইসেল ও তীব্র ধ্বনির সঙ্গে বেজে উঠলো।   সবাই আমরা ঈষ্ট দেবতাকে স্মরণ করলাম।  সারিবদ্ধ ভাবে আমাদের কনভয়ের গাড়িগুলি রংপোর স্টেজিং ক্যাম্পের গেট থেকে রওনা দিলো।  রংপো থেকে জুলুকের রাস্তায় আমাদের কিরকম অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হলো, কিভাবে আমরা জুলুকের স্টেজিং-কাম-এক্লিমেটাইজেসন ক্যাম্পে ৭ – ৮ দিন কাটালাম আর তারপর আমরা আমাদের যাত্রাপথের শেষ গন্তব্যস্থল কুপুপে ভারত-চীন সীমান্তে পৌঁছলাম তার গল্প তুলে ধরতে আর এক দিন আসবো আপনাদের সামনে।  ততদিন ভালো থাকবেন, সুরক্ষিত থাকবেন, আর অবশ্যই পড়তে থাকবেন “জেলার খবর সমীক্ষা”।  জয় হিন্দ।

বড় এলাচ গাছ

জোঁক চিকিৎসা

ক্রমশঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *