দেখা হবে

ডা. গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
যত দিন যাচ্ছে কুহকের মতো আশা সরে সরে যাচ্ছে। সময়টা বড় কম নয়, একবছরেরও বেশি সময় ধরে আশা আর নিরাশার নাগরদোলায় চেপে ক্লান্ত হয়ে গেছে মানুষজন। কবে এর শেষ, কবে স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি, একটু প্রাণ খুলে কথা বলব,শ্বাস নেব?
উত্তর টা কারও জানা নেই।
বিচক্ষণে বলবেন, ধৈর্য ,আর কোনও উপায় নেই–তবু কখনও কখনও অতি বিবেচকেরও তো ধৈর্য চ্যূতি হয়!
মাসের পর মাস অনিশ্চিতের আবর্ত। ঘরবন্দি জীবন। ঠিক কতদিন ধৈর্য ধরে রাখতে পারে মানুষ? শুরুতে যা ছিল প্যানিক, পরবর্তী সময়ে তা সয়ে গেল অনেকটাই। নভেম্বর ডিসেম্বরে এসে মনে হলো,যাক বাবা, বাঁচা গেছে!
পিছনে পরে থাকল নিরূদ্দেশে হারিয়ে যাওয়া মানুষের দল,রাজনীতির ফেরেব্বাজি,কাজ হারানো অসংখ্য মানুষ। তবু দু’দন্ডের স্বস্তি তো মিলল! তাই বা কম কি?
অনেকেই সতর্ক করেছেন। কেউ শুনেছেন, কেউবা শুনতে পাননি অথবা শুনতে চাননি। অতঃপর দ্বিতীয় ঢেউ।
শক্তি আরও খানিকটা বেশি,ক্ষয় ক্ষতি তীব্রতর। যাদের যাওয়ার কথা ছিল না, তাঁদের ও অনেকেই গেলেন। ভ্যাক্সিনের আকাল এবং বেওসাদারি, সিদ্ধান্ত নির্ণয়ে সংশয়, আরও অনেক কিছু ই ভয় আর অসহায়ত্বের তীব্রতা বাড়ালো। তবে কি এই ই পরিণতি? ভালো কিছু আশা করার কোনও অবস্থানে পৌছানোই যাবেনা আর?
সব কিছু ছাপিয়ে আজ সবার উপরে মনের চাপ, বেঁচে থাকাটাই এখন একমাত্র চাহিদা– পারব তো, সন্তান সন্ততি নিয়ে ঐ ঝাপসা কুয়াশার নোয়ার নৌকোয় উঠতে?
আসলে মানুষের একটা সাধারণ প্রবণতাই হ’ল, সে অনিশ্চয়তা মেনে নিতে পারে না। বুদ্ধিমান জীব হিসেবে দুনিয়ার বস্তুগত অনেক কিছুর উপর ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে মানুষ এবং ধরেই নিয়েছে এ পৃথিবীটা তার মতামত অনুযায়ীই চলবে। বাকি জীবজন্তু দের কিম্বা বাস্তুতন্ত্রের আদপেই রেয়াত না করেই তার এই জয়যাত্রা দিন কে দিন বেড়েছে। তার কিছু মূল্য তো দিতেই হবে! এই গা জোয়ারি কিন্তু এখনও যায়নি আমাদের। বিবর্তনের লম্বা রাস্তায় মানুষের সাথে ছিল “ফাইট অর ফ্লাইট” এর স্ট্র্যাটেজি। হয় লড়ে যাও শক্তি বুঝে নয় পালাও, বেগতিক বুঝলেই পালাও। য পলায়তে স জীবতি। মানুষের টিকে থাকার এইই মূলমন্ত্র! কিন্তু কখনও কখনও তো এমন অবস্থাও আসে যখন কিসের থেকে পালাবো আর কোথায় ইবা পালাবো তারও কোনও দিকনির্দেশ থাকেনা। রুখে দেওয়ারও অস্ত্র নেই, তখন? বাস্তবিক,এই সময়টা নত হওয়ার, নিয়ন্ত্রণের বাতিকে না ভুগে এ সময়টা মেনে নেওয়ার,গ্রহণ করার। তাতে করে আর কিছু না হোক,পলায়নের উত্তেজনায় চোখ কান বুঁজে যে সমস্ত সম্ভাব্য অসম্ভাব্য গাড্ডায় মানুষ পড়তে পারে তা থেকে রেহাই। উপরি পাওনা, পথের খোঁজ, পা-এ মন রেখে চলা!
এই পদ্ধতিতে গেল বছর খানিক সুফল পেয়েওছি আমরা। ঘর গোছাতে পেরেছি। শিখেছিও কিঞ্চিৎ।
একটা কথা অনেকের মুখেই শুনছি, গতবছর তো কতকিছুই করেছিলাম, এ বছর মনটা এতো ভার কেন? কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, একটা করে দিন কাটাচ্ছি আর ভাবছি,পরের দিনটায় থাকব তো? এরকম তো গতবার ছিল না! বছরের অর্ধেকটা কাটিয়ে মনে হচ্ছে এখনও কতটা বাকি,পারব তো?
কেন, কেন হচ্ছে এমন?
এই যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, হতাশার ছবি, নিঃসন্দেহে তা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এমন বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি যারা কোভিড কাটিয়ে উঠেও গভীর অবসাদে। অসংখ্য পরিবারের এমন মানুষ চলে গেছেন যা তাঁরা কয়েক সপ্তাহ আগে ভাবতেই পারেননি। এছাড়া ক্রমাগত জলস্রোতের মতো আসা নেগেটিভ খবরের একটা প্রভাব তো আছেই! মস্তিষ্কের মধ্যে এগুলি জারিত হয়, ভেসে ওঠে রাতের বিছনায় শুলে, ভোরবেলা ঘুম ভাঙে কি এক বিষণ্ণতায়। গতবছর যা ছিল নতুন অভিজ্ঞতা, আজ তা একঘেয়ে অবসাদ। সেখান থেকে বেরিয়ে আসারও কোনই উপায় নেই যেন!
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘ লার্নড হেল্প লেসনেস’, অসহায়ত্বের বোধ একটা, যা কাটিয়ে ওঠার উপায় নেই যেন, তাই তাগিদও নেই।
প্রকৃতি এমনভাবেই আমাদের সাজিয়েছে যেন বিপদের গন্ধ পেলেই মস্তিস্কের কিছু বিশেষ অংশ পাগলা ঘন্টি বাজাতে থাকে। এই দৌড়বাজি বহুসময় অকারণ হলেও বেঁচে থাকার শর্ত হিসেবে এই বাড়তি কাজটা ‘বেনিফিট অব ডাউট’ এর মতো। এ ঘন্টি বাজলে জেগে ওঠে শরীর ও মন। বিপদের সময় কিম্ কর্তব্য নির্বাচনে যার ভূমিকা অগাধ।
গতবছর আমাদের এটাই হয়েছিল। শুরুর দিকের উদ্বেগ, অস্থিরতা, দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ার কথা নিশ্চিত মনে আছে! প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অপ্রয়োজন সংগ্রহে ঘরভর্তি করা, অন্যের দিকে ফিরে না তাকানো, রোগী তো বটেই তার সাথে সংযুক্ত যে কোনও মানুষকেই অচ্ছুৎ করে ফেলাও এই প্যানিক বিহেভিয়ারেরই অংশ মাত্র।
সারভাইভাল ইনস্টিঙ্ক্টের তাগিদে মানুষ কতটা স্বার্থপর আচরণ করতে পারে,তা আমরা বেশ দেখলাম এ সময়ে। আমাদের এই যে ‘থ্রেট পারসেপশন’, সেখানেও কিন্তু মনের মধ্যে এটাকে টপকে যাওয়ার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা চলতে থাকে। আসলে এইভাবেই আমরা বিপদের মাপটা বুঝি, লড়তে পারার কোন্ কোন্ উপাদান আমার হাতে রয়েছে সেটাও বুঝি। যদি সেই সব অস্ত্র শস্ত্র কে আমাদের লড়বার জন্য উপযুক্ত বলে মনে হয় তো স্বস্তি। নইলে চাপ বাড়ে। এভাবেই শুরুর উদ্বেগ এবং চাপ অতিক্রম করেছি আমরা। মনে হয়েছে, আর ক’টা দিন কাটলেই তো শান্তি! ভ্যাক্সিনের সকাল সেসময়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলও বটে। তাছাড়া চারপাশের পরিস্থিতি ও অনুকূলে আসছে এমন একটা বোধ ও কাজ করতে শুরু করল।
এবছরের পরিস্থিতি একটু আলাদা। অতিমারি র ঘুরে ফিরে আসা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, স্থায়িত্বকাল সম্পর্কে একেবারে কোনও আন্দাজ ই করতে না পারা, অতিমারির মারণখেলায় কোনও সীমারেখা নির্ধারণের অপারগতা, সবকিছুই দায়ী এজন্য। বিপদ আছে, অথচ প্রতিকারের কোনও রাস্তা জানি না, এই বোধটা ভয়ের সাথে সাথেই আমাদের নিস্ক্রিয়তা বাড়ায়। এটাই তো অবসাদ! শয়নে স্বপনে একটা মৃত্যুবোধ,আজ আছি কিন্তু কাল না ও থাকতে পারি, এটা মেনে নেওয়া বড় সহজ নয়!
মানুষের জীবনে মৃত্যুর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় ছোটবেলাতেই। শুকনো পাতার খসে পড়া, পোষা পাখি কিম্বা আদরের ‘জিমি’ চলে গেলে, পরিবারের বয়স্ক কেউ যখন চলে যান তখন মা বাবার প্রতিক্রিয়ায়। এসব ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা হয় ঠিকই, এড়িয়েও যাই বটে, তবু কোথাও টিকে থাকা “নেই” হয়ে যাওয়ার বোধ জড়ো হয়েই থাকে । আমরা এইসব আলোচনা এড়িয়ে গেলেও, মৃত্যু বোধের এই দোটানা বয়ঃসন্ধি র সময় থেকেই ভেতরে থাকে। মনোবিজ্ঞান বলে, বয়ঃসন্ধির ভিডিও গেমস্, নেশা এবং হরেক মারণখেলার আড়ালে এই জেগে থাকা বোধই কাজ করে। ক্রমে কাজের জগতে আত্মসমর্পণ করি আমরা। বয়েস বাড়ে, ভেতরে কুড়ে খায়,”আমি নেই”! মহাভারতের বনপর্বের সেই কালজয়ী প্রশ্ন, আশ্চর্য কি? উত্তর টা সবাই জানেন, তবু মন বলে,তাইই কি সত্যি? নাকি নশ্বর বলেই এমন করে ভুলে থাকা?
এইসব সযত্নলালিত বোধের ব্যারিকেড যখন পরিস্থিতির অমোঘতায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তখন বিষণ্ণতা ছাড়া আর কিই বা অবশিষ্ট থাকে?
এখন যদি প্রশ্ন করেন, তবে কি এই হতাশায় ডুবে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই? বেঁচে থাকা মানেই তো একটার পর একটা ঢেউ, ভয়ের বুড়বুড়ি। নিতান্ত কোনও খড়কুটোও কি নেই কোথাও? আমি বলব, আছে, অবশ্যই আছে। আছে বলেই তো নেই এর বিস্তার! বলি তবে সেকথাও?
ইতিহাসে তাকালে দেখা যাবে শেষ গুরুত্বপূর্ণ অতিমারি, যা স্প্যানিশ ফ্লু নামে বিখ্যাত, এসেছিল অন্তত একশো বছর আগে। অর্থাৎ আমাদের কারোরই বলতে গেলে ‘ফার্স্ট হ্যান্ড নলেজ’ নেই এই বিষয়ে।
আমরা যুদ্ধ, দাঙ্গা, দেশভাগ, বহু কিছু দেখলেও এ অভিজ্ঞতা য় ষাট বছরে আর বিশ বছরে তফাৎ নেই। আরেকটি বিষয় হল, এই অতিমারির পাশাপাশি আরও একটি সমান্তরাল “অতিমারি”ও চলেছে,সেটি ইনফরমেশন ওভারলোড! মনের শঙ্কা বাড়াতে তার জুড়ি নেই। আগের কোনও মহামারি বা অতিমারিতেই এটি ছিল না। ঘরবন্দি মানুষ আর প্রধান তথ্য জানলা দিয়ে আসা ভয়াবহ খবরের বমবার্ডমেন্ট,সেই সাথে বাছবিচারহীন সমাজ মাধ্যম!
মানুষ নেগেটিভ খবর পেতে পছন্দ করুক না করুক, মনে রাখে অনেক বেশি। যেহেতু ভয়ের উৎসটি সে এড়াতে চায়,তাই কেবলই ভয়ের খবরেই তার নজর। মিডিয়া এটা বোঝে এবং একটা বড় অংশ এটা ব্যবহার করে। ক্রমাগত নেতিবাচক খবর আমাদের মনের ভার বাড়ায়।
হাসপাতালে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, গণ চিতা র প্রথম পৃষ্ঠার ছবি আমাদের বুকের ভেতর টা খালি করে দেয়। হাসপাতালে গেলে আর ফিরে আসব না এই দুর্ভাবনা সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরুর বাধা হয়ে দাঁড়ায়, প্রয়োজনীয় সময়ে রোগ লুকিয়ে রাখা আরও বড় জটিলতার সঞ্চার করে।
তবে কি চারপাশে যা শোনা যাচ্ছে সবটাই বানানো? মোটেই না, পরিকাঠামো থেকে পরিকল্পনা বহু কিছুর দৈন্য তো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট– কান কাটা রাজার মতই একখানা ভ্যাক্সিন ডোজ নিয়ে হণ্যে হয়ে ঘুরছেন মানুষ। ভোররাতের লাইনে চাপা দীর্ঘশ্বাস ও কি স্পষ্ট নয়? কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমার নিজের কাছে থাকা রসদ কি আমি ব্যবহার করলাম? কতো মানুষ ফিরলেন না এটা যেমন সত্যি, তেমনি ফিরে আসাটাও কি নয়? ঢাল তলোয়ার বিহীন ঐ “ফার্স্ট লাইন” বোড়েদের লড়াই তো মিথ্যে নয়!
আসলে মনের চাপ কমানোর প্রথম শর্তই হলো, পরিস্থিতির বাস্তব দিকটা সঠিক মাপে যাচাই করা । বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে ,এর কোনওটাই দেখা যাবে না।
খারাপ রাস্তায় গাড়ি যেমন ধীরে সুস্থে চালাতে হয়, তেমনি সংকট কালে সঠিক পরিস্থিতি না বুঝলে হিসেবে গন্ডগোল হবেই।
দ্বিতীয় বিষয়টি গ্রহণ করার শক্তি। ” সত্যরে লও সহজে” বলাটা যত সহজ, বাস্তবে ততোধিক কঠিন। সার কথাটা বলে গেছেন স্টোয়িক দার্শনিকের দল, এই পৃথিবীতে নিজের বাইরে আর কোনও কিছুর উপর তোমার কোনই নিয়ন্ত্রণ নেই। আর সেটা করতে গেলে সবার আগে যা ঘটেছে বা ঘটে চলেছে চারপাশে তাকে অস্বীকার করে লাভ নেই। যতটা পারা যায় ততটুকুই চেষ্টা,ক্ষতি কি?
গত একবছর ধরে আমরা যা হারিয়েছি সেটা “স্ট্রাকচার”, এতকাল যে কাঠামোতে আমাদের দৈনন্দিন বাঁধা ছিল এখন আদৌ নেই তা। মানুষ এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
কিন্তু এই স্ট্রাকচার কি নিজের মতো করে আবার তৈরি করে নেওয়া যায় না?
এটা ফিরিয়ে আনা জরুরি আর এই স্ট্রাকচার তৈরি করতে হবে নিজেকেই। হাবিজাবি চিন্তা আর একঘেয়েমি সরিয়ে নিজের ভালো লাগা, অগ্রাধিকার নিয়ে সাজান আপনার জীবন। এতকাল আমাদের চলাফেরার সবটাই ছিল অন্যের ঠেলায়। ফলে কাজের বাইরে এসে দাঁড়াতো শূন্যতা। একটা ভ্যাকুয়াম, একসিসটেনশিয়াল ভ্যাকুয়াম। কি দিয়ে তা পূর্ণ হবে? সাময়িক আনন্দ নাকি আরও বড় কিছু? ভোগের ফেনায়িত বিনোদন নাকি অন্যের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ? সিদ্ধান্ত আপনার,ফলাফলও। ফ্রাঙ্কেলের সতর্কবাণী মনে পড়ছে, যে ভাবে চলেছি তার মাশুল হ’ল অ্যাডিকশন, অ্যাগ্রেসন আর ডিপ্রেশন। বাস্তবিক, কোভিড আসার আগে থেকেই কি আমরা এই ঘোলাটে জলেই ছিলাম না? সবই তো ছিল আমাদের, তবে কেন আত্মহত্যার তালিকায় আর নেশার আত্মবিস্মৃতিতে মুখ ঢেকেছে এতকাল?
ধরা যাক,কোভিড বলে কিছু আসেইনি, তবু্ও কি খুব স্বস্তিতে ছিলাম আমরা? ন’শো নিরানব্বই বছরের গ্যারান্টিযুক্ত আয়ু নিয়ে?
ভেবে দেখুন, এই অতিমারি ও কিন্তু একটা “লার্নিং এক্সপেরিয়েন্স”, আমাদের শতচ্ছিন্ন ভুলের বাসাটি গুঁড়িয়ে দিতে এসেছে। এ থেকে শিখতে না পারলে আর কবে শিখবেন?
মানছি, কমবেশি সকলেই সমস্যায়, তবু ভালভাবে, নিশ্চিন্তে, আরও প্রাচুর্যে, আরও দেখানেপনার মধ্যে দিয়ে আমরা কোথায় পৌঁছেছিলাম একটু ঠাহর করে দেখুন দেখি! দেখবেন, আমাদের সমস্যার উৎসটি ছিল গাদা গাদা চয়েস! এটা না হলে ওটা, সেটা না হলে আবার একটার ঝোঁক! যা পেয়েছি তা গ্রহণ করার অবস্থান থেকে কখন যে বহুদূরে সরে এসেছি আমরা তা বুঝতেই বেলা গিয়েছে। আমাদের সন্তান সন্ততি তাই এতো বেসামাল আজ, হতাশাকে মেনে নেওয়ার ক্ষমতাই নেই তাদের। কোভিড আজ শেখাচ্ছে ঠিক কতটুকু আমাদের প্রয়োজন। মিনিমালিজিমের এই শিক্ষার বড়ো বেশি দরকার ছিল যে!
বাঁচতে চাই তো সকলেই, বাঁচতে হবেও আমাদের। কিন্তু একা একা স্বার্থপরের মতো না, সবাই না বাঁচলে কেউ বাঁচব না–এটা মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না কি?
কি জন্যে বাঁচব সেটাই তো ভুলে গেছিলাম! আজ একটা সুযোগ এসেছে নিজের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য টা,পারপাস টাকে নতুন করে খুঁজে নেওয়ার। যতদিন বাঁচব এই জন্য বাঁচব, যাতে করে মৃত্যুর পরেও হেঁটে যেতে পারি আরও দীর্ঘ পথ।
লাখো বছর ধরে মানুষের এই যে চলাচল সেখানে অন্যের জায়গা ছিল বলেই এতটা পেরেছি আমরা।
মেঘ কাটবেই। চলে যাবে কোভিড। আমাদের বেঁকে যাওয়া আত্মসর্বস্ব জীবন বদলাবে কি? যদি হয় তো বুঝব সংকটের শিক্ষা মনেপ্রাণে নিতে পেরেছি আমরা,না পারলে আরও বড়ো ঢেউতে হারিয়ে যাবো।
সাবধানে থাকুন। নিজের সাথে পাশের মানুষটার কথাও ভাবুন। ঘটনার উপর আমার আপনার হাত নেই, কেবল প্রতিক্রিয়ার উপরই নিয়ন্ত্রণ টুকু আছে। তাই তৃতীয়, চতুর্থ , পঞ্চম নিয়ে না ভেবে ভাবুন কি শিখলেন, কতটা শিখলাম! সারাজীবনও যদি এসবে কেটে যায় তাও সই, বিপদ বরণ না হলে আর মরণহরন হবেন কি করে?
লড়ে যাক আমাদের সন্তান, শিখে নিক ছদ্ম আশ্বাস না, আসল আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় লড়তে লড়তেই। ভরসা রাখি আবার পথে নামব,দেখা হবে বন্ধু, আবার দেখা হবে।
(পুনঃপ্রকাশিত)