আমাদের গর্বের অরুনিমা

তাপস বাগ
অদম্য ইচ্ছে শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের কাছে কোন কিছুই বাধা নয়। জীবনে যত বড়ই ঝড় আসুক, বিপদ আসুক – – লড়াই করে বিকল্প পথ ঠিকই খুঁজে নেয় চ্যাম্পিয়নরা। দেশ তথা জাতির কাছে তারা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে, সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও, আকাশ ছোঁয়ার দুরন্ত সাহস দেখিয়েছে ভারতকন্যা অরুনিমা সিনহা।
উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরে জন্ম মেয়েটির। জাতীয় দলের কৃতী ভলিবল খেলোয়াড়। একটু স্বাচ্ছন্দে থাকার জন্য একটি সরকারি চাকরির খুব প্রয়োজন। তাই C.I.S.F. পরীক্ষাটা দিতে লখনৌ থেকে পদ্মাবতী এক্সপ্রেসে’ উঠে পড়েছিল দিল্লি যাবার উদ্দেশ্যে। ওটাই যে অভিশপ্ত রাত ছিল, কে জানে । তারাহুড়তে রিজার্ভেশন টিকিট পাওয়া যায় নি। তাই কোনোরকমে জেনারেল কামড়াতেই উঠে পড়েছিল। ট্রেন চলতে থাকার কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন দুষ্কৃতী চড়াও হয় অরুনিমার ওপর। উদ্দেশ্য ছিল গলার সোনার হার ও সঙ্গে থাকা ব্যাগটি ছিনতাই করা। একজন সোনার চেনটা টেনে ছিনিয়ে নিতেই, মেয়েটি সজাগ হয়ে চেনটা কেড়ে নিতে চাইল। শুরু হল ডাকাতদের সঙ্গে ধস্তা-ধস্তি। হাত-পা ছুঁড়ে লড়াই অরুনিমার, চিৎকার করলেও ভয়ে এগিয়ে এলো না কোন সহযাত্রী। বেগতিক দেখে ডাকাতদল টেনে-হিঁচড়ে দরজার কাছে নিয়ে গেল অরুনিমাকে। তারপর চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিলো মেয়েটিকে। মুহূর্তে একরাশ অন্ধকার। আবার সেই সময়েই পাশের লাইন থেকে ছুটে এল আরও একটি ট্রেন। সজোরে ধাক্কা। পায়ের হাড় গুলো ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। থেমে গেল সোনালী স্বপ্ন। সারা রাত অমানুষিক কষ্ট যন্ত্রণায় রেললাইনের ওপর পড়ে রইল মেয়েটি।
ভোর হতে কিছু মানুষজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসায় বাঁ -পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে বাদ দিতে হয়। এক রাতের মধ্যেই জাতীয় দলের খেলোয়াড় থেকে প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয় অরুনিমা। তবে প্রতিবেশীদের করুণার পাত্রী হয়ে সে বেঁচে থাকতে চায় নি । হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সে শুরু করল বিকল্প খেলার ট্রেনিং। বিরামহীন অনুশীলন। আর দু’বছরের মধ্যেই সকলকে চমকে দিয়েই প্রথম মহিলা প্রতিবন্ধী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে অরুনিমা। ক্রিকেটার যুবরাজ সিং এর ক্যান্সার জয় করে আবার ফিরে আসার লড়াই ওকে অনুপ্রাণিত করে। এভারেস্টজয়ী বাচেন্দ্রী পাল এর অনুশীলনে একে একে জয় করেছেন ইউরোপের এলব্রুস পর্বত, আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট কশ্চিয়স্কো, দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়া পর্বত, ওশেনিয়ার পুথজক জায়গা। গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড, বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী মহিলা অভিযাত্রী হিসেবে আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয় করেছেন। বাঁ পা অর্ধেকটা কাটা, ডান পায়ের থাইয়ে স্টিলের রড ঢোকানো সাহসী কন্যা অরুনিমার লক্ষ্য পৃথিবীর সবকটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলি জয় করা। পেয়েছেন ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার। সংবর্ধিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। ভারতবাসীর গর্ব এই মহীয়সী নারী কে কুর্নিশ।