August 21, 2025

পল্টু ভট্টাচার্য

কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। আবার কঠোর বিকল্পের কোন পরিশ্রম নেই। এহেন সমস্যার মধ্যেই সমাধান। তাই বুঝি আমরা সদাই বিকল্পের সন্ধানে থাকি। অতিমারীতে শিক্ষাব্যবস্থা ও পঠন পাঠন এক নতুন রুপরেখা নিয়েছে। তার গালভরা নাম অনলাইন। শুনলে মনে হয় কি না কি কিন্তু বাস্তবে কতগুলো বোতাম টেপার খেলা। স্কুল কলেজ চলছে এই বিচিত্র ব্যবস্থাপনায়। কতটা শিখল, কত জ্ঞান বাড়লো জবাব দেবে ছাত্র-ছাত্রী বোতাম টিপে। হায়রে শিক্ষা ব্যবস্থা তুমি যে জাতির মেরুদন্ড তা বোধহয় আমরা ভুলতে বসেছি । কিন্তু জীবিকাদাতারা এই ব্যবস্থা মানতে নারাজ । এ তো ঘোর কলি এসেছে ঘনায় — গান-বাজনা, কবিতা, আলোচনা, সভা, সবকিছু চলছে অন-লাইনে। তাৎক্ষণিক চমক থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী কোন অনুভূতি নেই ।

অর্থকরী ব্যবস্থাটা প্রত্যেক মানুষের গোপন ও নিজস্ব। বর্তমানে বিকল্প ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন, কাড ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থের লেনদেন চলছে । ফলে সমস্ত বিষয়টা মুক্ত হয়ে নানারকম চৌর্যবৃত্তি ও তঞ্চকতার শিকার হচ্ছে। ফলে মানুষ দিশেহারা । গরিব মানুষের কথা না হয় বাদ দিলাম । একি বিকল্প ?

আমরা পারিবারিক অনুষ্ঠানে সদলবলে উপস্থিত হতাম। এখন তার বদলে বিকল্প একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফোন বা টিভির সামনে বসে ডিজিটাল মাধ্যমে কথা চালাচালি। এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো । মানুষে মানুষে  মেলামেশা করে বেঁচে থাকার দিন শেষ। না হলে work-from-home এক বিচিত্র বিকল্প । বাড়ির খাট চৌকি মিলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা ফোন আর ল্যাপটপে অফিস।  ছুটি প্রায় নেই বললেই চলে। ডিউটি প্রায় রাত ভোর । তবে হ্যাঁ মাস মাইনে ভালো এবং সময়ে ব্যাংকে টাকা চলে আসে। কিন্তু জীবন সে তো যন্ত্র! কি বিকল্প খুঁজে পেলাম।

শিল্পচর্চায় টিভির সামনে কলা-কুশলীরা আলাদা বসে সংলাপ বলছে। এক বিচিত্র পরিবেশ। নাটকের দর্শকের সঙ্গে ভাব রসের বিনিময় হওয়ার সুযোগ কম । এ কিসের উত্তরণ ঘটছে? সব কিছুর বিকল্প খুঁজতে গেলে আসল রসটা হারিয়ে যায় । তখন মানুষকে আর আকর্ষণ করে না । তাই একেবারে সম্ভব না হলে থেমে থাকা উচিত সময়ের জন্য । তবে যুগোপযোগী হতে গেলে আমাদের তো বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতেই হবে । অতঃ কিম?

বিকল্পের ভাল দিকও আছে। আগে আমাদের ট্রেন, প্লেন, দূরপাল্লার বাস প্রভৃতিতে প্রচুর সময় নষ্ট করে গন্তব্যের টিকিট জোগাড় করতে হতো। আজ সেটা কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার। স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে কোন বাধা নেই। যে কোন জিনিসের হাল-হকিকত জানতে ইন্টারনেটের যে অবদান তা অনস্বীকার্য। ধরুন আপনি দেশ-বিদেশ থেকে স্বদেশের সাথে যোগাযোগ করতে চান।  আজ সেটা বিকল্প ব্যবস্থায় অতি সহজ সাধ্য। বিদেশের অনুষ্ঠান, বিদেশের খাবার-দাবার, পোশাক, আসবাবপত্র সবই বিকল্প ব্যবস্থায় আপনার মুষ্টিবদ্ধ। তাই বিকল্প ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় আমাদের অভ্যস্ত হতে আরও সময় নেবে। কারণ দিন দিন যে ভাবেই ডিজিটাল ব্যবস্থায় প্রতারণা বাড়ছে তাকে সামাল দেওয়া মুশকিল। তাই বলতেই হয় ধীরে ধীরে রজনী – – আজকাল অনেক ইন্টারনেটে পাত্র পাত্রী পছন্দ, বিবাহ-শ্রাদ্ধাদি সারছে।  তা সমর্থন যোগ্য নয়। এতে বিপদ ভারী। ল্যাজা, মুড়ো-র হদিস পাওয়া মুশকিল। তাই সঠিকভাবে বিকল্প ব্যবস্থায় অভ্যস্ত না হয়ে ঝাঁপানো উচিত নয়। সেটা পতঙ্গের আগুন ঝাঁপ হয়ে দাড়াবে। পারিবারিক ব্যবস্থায় বিকল্প খুঁজতেই হয়। পরিবারের লোক কম কাজ বেশি, বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে প্রচুর লেখালিখি করা যায়। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হয় না। তাই প্রকৃত বিকল্পকে কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন জীবন পালন করা উচিত ।

আমরা বাঙালি। আমাদের জীবনে হাজারো রঙ্গ-ব্যঙ্গ। শেষ করবো এক নবতম সার্থক বিকল্প ব্যবস্থার উদ্ভব এর কথা বলে । সেটা হচ্ছে রাতের আহার-এর রুটির জোগাড়। গ্যাসের দাম বাড়ন্ত, শারীরিক ব্যথা বেদনা, সন্ধ্যেবেলায় সিরিয়াল, সব যেন রুটির পিছনে আরে হাতে লেগেছে। তাই দোকান থেকে কিনে আনা ভালো। সবকিছু বাঁচে। আর বাঙালি বর্তমানে এই শিল্পকে প্রচন্ড জনপ্রিয় করেছে। এই বিকল্প ব্যবস্থার জয় হোক । এই শিল্প দীর্ঘ জীবন লাভ করুক । ‘জেলার খবর সমীক্ষা’-কে বিনীত অনুরোধ হাওড়া জেলার রুটি শিল্পকে আলোকপাত করুন। জয়তু বিকল্প ব্যবস্থা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *