সময়ের ব্যবধান

প্রিয়া কুন্ডু নন্দী
ইচ্ছাশক্তি হল মানব সভ্যতার প্রধান চালক। শুভ যে কোন কাজের মূল চালিকা শক্তি। আমরা পৃথিবীতে একমাত্র কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারি, এর কোন বিকল্প নেই। তাই ছোটবেলা থেকে শুনে আসা ‘পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি’ এই কথাটাকে জীবনের সার করে তুলেছে অনিতা। অনিতা সদর্থেই এক পরিশ্রমী গৃহবধূ। তার জীবন নিয়ে যে স্পষ্ট ধারণাটা গড়ে উঠেছে তা হল জীবন শুধুই প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম। দিনটা ছিল সোমবার। অনিতা ব্রেকফাস্টে রুটি তরকারি বানাতে ব্যস্ত। ফোনে হোয়াটস-অ্যাপ ম্যাসেজ এল – নোটিফিকেশন আসার শব্দ শুনে বুঝতে পারে। এসব দেখার সময় নেই হাতে। বিল্টুর অনলাইন ক্লাস শুরু হবে সকাল দশটায়। এখন ঘড়িতে নটা বেজে পনেরো। ছেলেকে তৈরী করে ক্লাসে জয়েন না করানো অবধি অনিতার স্বস্তি নেই। সারাদিনের ঘরকন্না সেরে টিউশান ও হাতের সেলাই-এর অর্ডার নিয়ে সংসারের জন্য কিছু উপার্জন করে। অনিতার দুচোখের তলায় কালি পড়ছে। দুপুরে ফোন সার্চ করতে গিয়ে ডেকে পুরানো বান্ধবী কমলিনীর মেসেজ। অনিতাকে অনলাইন বুটিক ব্যবসার প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
অনিতা চ্যাটে উত্তর লিখে পাঠায় “একটু ভেবে দুদিন পর তোকে জানাবো।”
অফিস ফেরত বিল্টুর বাবাকে চা দিতে এসে অনিতা বলে “হ্যাঁগো, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। তবে তোমার পুরো সম্মতি চাই। তা নাহলে কাজটায় আমি এগোতে পারব না।”
বিল্টুর বাবা বলে, “কী কথা শুনি।”
অনিতা পুরো ব্যাপারটা খোলাখুলি বলে। বিল্টুর বাবা বলে, “আর কেন! ছোট্ট সংসারে দুবেলা দুমুঠো অল্প হলেও জুটছে। এতো পরিশ্রম তোমার শরীর টানতে পারবে?”
অনিতা বলে উঠল, “দুপুরে ফাঁকা থাকি। না হয় সেই সময়ে ব্যবসা শুরু করি।”
বিল্টুর বাবা কথা না বাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করে। অনিতা ভুক্তভুগি। পুরো লকডাউনে বিল্টুর বাবা ঘরে বসেছিল। ছিল না তেমন অর্থ। যা হোক করে জমানো টাকায় সংসার চলেছে। সেদিনগুলো এতটাই কষ্টে কেটেছে। ভেবেছিল কদিন পর সব আগের মত হবে। কিন্তু কোথায় কী ? দু’বছর হতে চলল তবু অবস্থা বদলালো না। লকডাউনের আগে যেমন সুখে শান্তিতে ছিল যদি সত্যিই আর তেমন দিন না ফিরে আসে! অনিতা আর ভাবতে পারে না। জানে আর কোনও কাজ নিলে তার শরীর নিতে পারবে না, তবু সেই লকডাউনের চরম কষ্টের দিনগুলো যাতে ফিরে না আসে, সে জন্যই বিকল্পের কথা ভাবাটা তার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।