জহর চট্টোপাধ্যায় — এর দুটি কবিতা

বিদ্যাসাগর
সেই যে ছিলেন বিদ্যাসাগর উপাধিতেই নাম,
জন্মেছিলেন মেদিনীপুরে বীরসিংহ গ্রাম।
সবার দুঃখে প্রাণ কাঁদে তার, স্বভাবে একরোখা,
কিন্তু তাহার জ্ঞানের সীমার যায়না লেখাজোকা।
কলকাতাতে পড়তে এলেন, হেঁটে বাবার সাথে,
ইংরেজির সংখ্যামালা শেখেন চলার পথে।
অবাক করা মেধা ছিল সঙ্গে শেখার জেদ,
দারিদ্রতা অনাহারে পড়েনি তার চেয়ে ছেদ।
সাগর সমান বিদ্যা হলেন অবলীলায় পার,
নিজের কাঁধে তুলে নিলেন জাতি শিক্ষার ভার।
তাঁরই হাত ধরে, লিখতে পড়তে, শিখল বঙ্গ জন,
আজও বাঙালির, বিদ্যাশিক্ষায় তাঁকে বড় প্রয়োজন।
—-
চিরভাস্বর বিদ্যাসাগর
বিদ্যা তাঁহার সাগর সমান,
আকাশ সমান মন,
শ্রদ্ধানত তার চরণে
অখিল বিশ্ব জন।
বাংলা ভাষায় গদ্য লেখার, তিনিই দেখান রাস্তা,
পরিচয় পেতে বর্ণমালার আজও বাঙালির আস্থা।
ঐক্যে বাক্যে মানিক্য গড়ার পথের দিশারী তিনি,
শিক্ষা গঠনে, বিদ্যা-সদনে, বহমান স্রোতস্বিনী।
সমাজটাকে বদলে দিলেন সরিয়ে শতেক পঙ্ক,
শিক্ষাধিকার দিলেন বলেই নারীরা নিঃশঙ্ক।
বৈধব্যের দুঃখ নিদান গড়েন যে সব ভন্ড,
তাদের সঙ্গে লড়ে গেলেন খাড়া রেখে মেরুদন্ড।
দান করেছেন অর্থ, বিত্ত, কখনো কায়িক শ্রম,
তবুও বাঙালি নিন্দা কুৎসা দেয়নি তো তাকে কম।
তাই সব ছেড়ে, চলে যান দূরে, অন্তজ জন মাঝে,
লোকহিত চেয়ে, অপবাদ পেয়ে, বড় ব্যথা হয়ে বাজে।
মূর্তি ভাঙছে দুষ্কৃতী আজও,
মুছতে পারেনি নাম,
চিরভাস্বর শিক্ষাগুরু
তোমাকে প্রণাম।।