August 21, 2025

জবাব দেওয়ার ডুরান্ড কাপ

বহু বিজয়ী কিন্তু এক ঐতিহ্য। ২০২৩ সালের ১৩২ তম ডুরান্ড কাপ এই স্লোগান নিয়েই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবারের ডুরান্ড কাপটা বোধহয় প্রতিশোধ নেওয়ার, জবাব দেওয়ার, ঘুরে দাঁড়ানোর টুর্নামেন্ট। বহু ঐতিহ্যময় এই টুর্নামেন্ট ১৮৮৮ সালে প্রথম শুরু হয় তারপর নানা ওঠা পড়ার মধ্যে দিয়ে এই টুর্নামেন্ট ১৩২ তম সংস্করণে এসে দাঁড়িয়েছে।
ইতিহাসের পাতা দেখলে
যদিও ১৮৮৮ সালের ডুরান্ড কাপ কে কলঙ্কিত করেছিল তৎকালীন কলকাতার মেজর জ্যাকসন সাহেবের কূটনীতি। বর্তমানে এই টুর্নামেন্ট কলকাতায় হলেও অংশ নেয় গোটা ভারতের সেরা কিছু দল এবং এবার অংশ নিয়েছিল নেপাল এবং বাংলাদেশের ও দুটি দল। কিন্তু প্রথমবার ডুরান্ড কাপ কমিটির কাছে আবেদন পত্র জমা দিলেও অংশগ্রহণ করতে পারেনি নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ওয়েলিংটন ক্লাব। সেবার খেলেছিল ব্রিটিশ সামরিক দলেরাই। যদিও পরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে, সুযোগ পায় ভারতীয় দলরাও। সবথেকে বেশি এই প্রতিযোগিতা জয়লাভ করে মোহনবাগান ( এই বছরেরটা নিয়ে মোট ১৭ বার) এরপর ইস্টবেঙ্গল ( ১৬ বার)।
গ্রুপ পর্বের খেলা
এবারের ডুরান্ড কাপ শুরু হয় ৩রা আগস্ট। মোহনবাগান প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ আর্মিকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। যদিও ইস্টবেঙ্গলের শুরুটা ভালো হয়নি। ২-২ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ আর্মির বিরুদ্ধে । প্রথমেই বলেছি এই ডুরান্ড কাপ টা জবাব দেওয়ার, ঘুরে দাঁড়ানোর টুর্নামেন্ট। গত বছরের আইএসএলে একদম শেষ স্থান পাওয়া নর্থইস্ট ইউনাইটেড এবারের ডুরান্ড কাপে একটা ম্যাচেও না হেরে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায়। শুধু কোনো ম্যাচ না হেরেই নয় প্রতি ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতে নকআউটে পৌঁছয় নর্থইস্ট। কিন্তু আসল জবাবটা বোধহয় দিল লাল হলুদ বাহিনী, গত তিন বছর ধরে যাদের কোন উপযুক্ত দল ছিল না, কোন ভালো কোচ কিংবা পাশে ছিল না কোন লগ্নিকারী। গত তিন বছর ধরে লাল হলুদ সমর্থকরা শুধু দেখেছেন তাদের প্রিয় দলের পতন। গত তিন বছর ধরে টানা ৮ ডার্বি হারের যন্ত্রণা বুকে করে নিয়ে এবারের মরসুমের প্রথম বড় ম্যাচ দেখতে ১২ আগস্ট ভিড় করেছিল বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কোচ কার্লোস কুদ্রাত ও উইঙ্গার নন্দকুমার যেন আবার নিভে যাওয়া মশালকে পুনরায় প্রজ্বলিত করলেন । নন্দকুমারের বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শট যেন গোলে প্রবেশ করতে করতে বলে গেল এভাবেও ফিরে আসা যায়। ০-১ গোলে হেরে গেল মোহনবাগান। দর্প চূর্ণ হল ভারত সেরাদের। না এখানেই শেষ নয় জবাব দেওয়া এখনো বাকি আছে।
কোয়াটার ফাইনালের রোম হর্সকতা
আবারও চমক দেখালো নর্থইস্ট আর্মি রিটকে হারিয়ে চলে গেল সেমিফাইনালে। কিন্তু মুসলমান বাহিনী যেন সেই তেজ খুঁজে পেল চার বছর আগে যে গোকুলোময় কেরালার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল তাদেরকেই ২১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে প্রবেশ করল দর্প চূর্ণের ছবিটা যেন শেষ করল মেরি নার্সরা মোহনবাগান আইএসএলে যোগদান করার পর থেকেই বারবার কাটার মত বিদেশে মুম্বাই সিটি এফসি গত ৩ মৌসুম ধরে মুম্বাই সিটির কাছে বাড়ি বাড়ি নৌকা ভেঙেছে। তাই এবার ছিল জবাব দেওয়ার পালা। মোহনবাগান ও অসম্ভবকে সম্ভব করল ৩-১ গোলে মুম্বাইকে হারিয়ে যেন হেরে যাওয়াদের বার্তা দিয়ে গেল। জগতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয় কোন কিছুই অসম্ভব নয়। এবার পালা শেষ চারের লড়াই সেমিফাইনালে টানটান উত্তেজনা আবারো ফিরে আসার লড়াইয়ের সাক্ষী থাকলো যুবভারতী। প্রথম সেমিফাইনালে অপরাজেয় নর্থ ইস্ট দুই গোল করে প্রথমবার ফাইনালে ওঠার জন্য প্রহর গুন ছিল কিন্তু আঘাত হানল নতুন রূপের ইস্টবেঙ্গল অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে গোল করে আবারো ত্রাতা হয়ে উঠলেন নন্দকুমার। খেলা গড়ালো পেনাল্টি শুট আউট এ বেঙ্গল পাঁচ দিন বলে জিটি 19 বছর পর ডুরান্ড কাপের ফাইনালে পৌঁছল। জবাব দিয়ে গেল মোহনবাগানে এফসি গোয়া ০১ গোলে এগিয়ে গেলেও দুই এক গোলে ম্যাচ জিতে নেই সবুজ মেরুন ব্রিগেড। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই হয়তো আবারও একবার মুখোমুখি কলকাতার ২ প্রধান ফাইনালে বড় ম্যাচ ফিরে আসার পালা ডুরান্ড কাপ ফাইনাল ২০২৩ মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল কলকাতা ফুটবল প্রেমীদের কাছে এর থেকে বড় পাওনা বোধ হয় আর কিছু হতে পারে না। কেন বারবার বলছি এবারের টুর্নামেন্ট টা ফিরে আসার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশোধ নেওয়ার তা এবার প্রমাণ করল। মোহনবাগান ঘুরে দাঁড়ানো বোধ হয় একেই বলে গোটা টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র যে দলের কাছে হার মানতে হয়। সেই দলকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট টা জেতার মধ্যে এক আধিপত্য আছে। মোহনবাগান সেটাই করল এবং সেই ঘুরে দাঁড়ানোর বৃত্তটাকে সম্পূর্ণ করল। ১২ আগস্ট নন্দকুমার চুপ করিয়ে দিয়েছিল। সবুজ মেরুন সামর্থকদের কিন্তু তেসরা সেপ্টেম্বর দ্বিমিত্রী পেত্রা ত্রসের বাঁ পায়ের কামান দাদা শট চোখে জল এনে দিয়েছিল। সকল সমর্থকদের সবুজ মেরুনের চোখের জলটা ছিল ২৩ বছর পর 17 নম্বর ডুরান্ড কাপ জেতার তৃপ্তি কিন্তু লাল হলুদের চোখের জলটা ছিল তিন বছর পর আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেও দল ব্যর্থ হল। মনে থেকে যাবে এই টুর্নামেন্ট। মনে থেকে যাবে কলকাতার ২ শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের এক রূপকথার লড়াই শেষের কথা কিন্তু জয়ী হবে একজনই সে হল বাঙালির আবেগ ভালোবাসা সবার সেরা ফুটবল। তাইতো বারবার যেন সে শিখিয়ে দিয়ে যায় জগতে কেউই অপরাজ্য নয় কোন কিছুই অসম্ভব নয় প্রতি মেসি জন্ম দেয় এক তারকার তৈরি হয় নতুন ইতিহাস। ইস্টবেঙ্গলের লড়াইকে সম্মান করে ১৭ নম্বর ডুরান্ড কাপ জয়ের আনন্দে এক মোহনবাগান সমর্থক হয়ে বলছি এ বাড়ির এই বাড়ির ডুরান্ড কাপ আমাদের শিখিয়ে গেল জন্মেছি মাথায় নিয়ে খেলোয়াড়ি পরোয়ানা বুকের এই কলজে বলে লড়াই কর হার না মানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *