সাতে পাঁচে শোলে
সুজয় বাগচী
ভারতীয় চলচ্চিত্র শোলে এক মাইলফলক ।১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। ঠিক ২৮বছর পর ঐ একই দিনে জন্ম এই বিখ্যাত ছবির। আজ সে ৪৭সের প্রৌঢ়। ৭৫-এর স্বাধীনতার মতোই “শোলে” ভারতবাসীর সাথেও পাঁচেও। আসুন সেই ৭৫-এর শোলের কিছু জানা অজানা কথা যা আজ ইতিহাস
ভারতের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ শোলের চিত্রনাট্য ছাত্র-ছাত্রীদের এখনো নিয়মিত পড়ানো এবং বোঝানো হয়।রমেশ সিপ্পি সত্তর এর গোড়া থেকেই সেলিম জাভেদ এর গল্প নিয়ে ছবি করছেন।১৯৭১ মুক্তি পায় শাম্মি কাপূর হেমা মালিনী কে নিয়ে “আন্দাজ”। ১৯৭২ সালে মুক্তি পায় সীতা অউর গীতা আবার সুপারহিট। রমেশ সিপ্পি এই ধরনের ছবি করছেন পুরো মারদাঙ্গার ছবি করছেন না। সেলিম জাভেদ এর নতুন গল্প ডাকাত আর মারদাঙ্গার । তাই তারা প্রথমে মনমোহন দেশাইয়ের কাছে যান। মনমোহন দেশাই তখন ধর্মেন্দ্র রণধীরকে নিয়ে “চাচা ভাতিজা”য় ব্যস্ত, ফিরিয়ে দেন করবেন না বলে।তারপর তারা প্রকাশ মেহেরার কাছে যান। সেই সময় (১৯৭২) বাজারে প্রকাশ মেহেরার ব্লকবাস্টার “জঞ্জীর” চলছে তার গল্পও সেলিম জাভেদের। তবু প্রকাশ রাজি হননি কারণ তাদের জুটির বদনামের জন্য। যখন তারা মুম্বই-এ মাটি পাবার জন্য লড়ছেন তখন একই গল্প একটু এদিক ওদিক করে দুজন জনপ্রিয় পরিচালককে বেচে দেন। দুজনেই কাস্টিং করেন, প্রকাশ মেহেরা ছবি আগে শুরু করেন। এরপর দ্বিতীয় পরিচালক নাসির হোসেন শুরু করার আগে সবাইকে ডেকে ছবির গল্প বলেন। অভিনেতা আলাদা আলাদা শুধু ভিলেন দুটো ছবির এক অজিত। গল্প শুনেতো অজিত চমকে ওঠেন, একই গল্প। সবাই চলে যাবার পর নাসির হোসেনকে একান্তে সব বললেন। নাসির হোসেন রাতারাতি নিজে লিখে গল্প পাল্টে দিলেন। মূল গল্প ঠিক রেখে এক ভাইয়ের পরিবর্তে তিন ভাই করে Lost & Found ছকে ফেলে দিলেন।”জঞ্জীর” মুক্তি পেয়ে ছিল ১১ মে ১৯৭২ আর “ইয়াদোঁ কী বারাত” মুক্তি পেয়ে ছিল ২রা নভেম্বর ১৯৭৩। দুটো ছবিই সুপারহিট হয়।
অগত্যা সেলিম জাভেদ জুটি পরিচালক রমেশ সিপ্পির দ্বারস্থ হন। রমেশ সিপ্পি গল্প শুনে প্রাণিত হন। বাবা জিপি সিপ্পির সঙ্গে আলোচনায় বসে হলিউড ঘরানার অ্যাকশনধর্মী একটি হিন্দি ছবি করার কথা বলেন কিছু অদল বদল হয়। ‘গল্পের পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত
চেহারায় হলিউডের বেশকিছু প্রভাব এসেছিল। কিছুটা রমেশ সিপ্পির পরামর্শে, সেইসময় পরিচালক রমেশ সিপ্পি তরুণ কুমার ভাদুড়ির (জয়া ভাদুড়ির বাবা এবং সাংবাদিক) লেখা ‘অভিশপ্ত চম্বল’ বইটির হিন্দি সংস্করণ পড়েছিলেন। বই পড়া ছাড়াও রমেশের ওপর প্রভাব
ছিল জাপানি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার ‘সেভেন সামুরাই’ এবং জন স্টারজেসের ‘দ্য ম্যাগনিফিশিয়েন্ট সেভেন’ ছবি দুটির। রমেশ সিপ্পি ‘কারি ওয়েস্টার্ন’ ভাব ধারায় প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন ওয়েস্টার্ন ফিল্ম মেকিংয়ের কলাকৌশলে ভারতীয় গল্প বলবেন।
রমেশের নিজেই বলেন ১৯৭১-এ তৈরি হওয়া ডাকাতদের নিয়ে সুপারহিট ছবি ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’- এ মুখ্য ভিলেন বিনোদ খান্নার চরিত্রের নাম ছিল ‘জব্বর সিং’। ‘শোলে’ করার সময় রমেশ সিপ্পির ওই নামকরণে নিজের ছবির ভিলেনের নাম করলেন ‘গব্বর সিং’। ‘
কথিত আছে গল্পে ‘ঠাকুর’ চরিত্রের ন্যারেশন শুনে একসঙ্গে প্রায় সবাই ওই চরিত্রটি নিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলেন। অমিতাভ চাইলেন তিনি করবেন। ধর্মেন্দ্র চাইলেন তিনি করবেন। এসময়ে পরিচালক রমেশ সিপ্পি ধর্মেন্দ্রকে বোঝালেন, ধর্মেন্দ্র যদি ওই রোল করেন, তাহলে হেমাকে তিনি পাবেন না৷ সেই সময় ধর্মেন্দ্র ডেট করছিলেন হেমাকে। তাই ধর্মেন্দ্র তাড়াতাড়ি ‘বীরু’-র রোলে ফিরে এসেছিলেন। সঞ্জীব কুমার, যিনি ‘ঠাকুর’-এর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, ‘শোলে’- র সেটে হেমার কাছে প্রেম নিবেদন করতে যান। কিন্তু তখন অলরেডি ধরমের সঙ্গে হেমা এনগেজড হয়ে গিয়েছেন। তাই ধরম আর হেমা এটা নিয়ে প্রতিবাদ করেন। রমেশ সিপ্পি সেই আশঙ্কাজনক পরিবেশে না যাওয়ার জন্যই ‘শোলে’-তে হেমা আর সঞ্জীব কুমারের একটিও ফ্রেম রাখেন নি।
ছবিতে বীরুর চরিত্রে প্রথমে ঠিক হয়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু শত্রুঘ্ন তখন ভিলেনের রোল ছেড়ে একক নায়ক হিসেবে হিন্দি ছবিতে প্রতিষ্ঠা পেতে চাইছিলেন। তাই রমেশ সিপ্পির মাল্টিস্টারার ছবির অফার তিনি নিলেন না। নিজেদের হিরো ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে গব্বর সিং চরিত্র করার জন্য অমিতাভ, ধর্মেন্দ্ররাও মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরিচালক রমেশ ওই চরিত্রে ভেবেছিলেন ড্যানি-কে। কিন্তু ড্যানি সেই সময়ে ফিরোজ খানের ‘ধর্মাত্মা’ ছবির শুটিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই ওই চরিত্র করতে পারেননি। আসলে ‘গব্বর’- এর চরিত্রে আমজাদ খানের নাম রমেশ সিপ্পি কে সুপারিশ করেছিলেন সেলিম-জাভেদ। হিন্দি সিনেমার পুরনো দিনের ভিলেন জয়ন্তের (স্ক্রিন নেম। আসল নাম ছিল জাকারিয়া খান) দুই ছেলে। নিজে প্রচুর ছবি দিলীপ কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সুন্দর দেখতে লম্বা ফর্সা, সারা ভারত তাঁকে “জয়ন্ত” নামেই চেনে। তাঁর বিশেষ কয়েকটি ছবি হল “অমর”, “মেমদিদি” এবং “নাজনিন”। এই “নাজনিন” ছবিতে তাঁর এগারো বছরের ছেলেকে সুযোগ দেন। নাজনিন হিটও হয়। এটা ছিল ১৯৫১ সাল, ১৯৫৭ সালের আবার সুযোগ পান “অব দিল্লি দূর নেই”। এরপর কে. আসিফের সহযোগি হিসাবে যুক্ত হন এবং “লাভ & গড”-এ একটি বড় রোল পান। ছবি বন্ধ হয়ে যায় এবং কে. আসিফ মারা যান । আবার সুযোগ পান ১৯৭৩ সালে খুব ছোট্ট রোলে, ভারত পাকিস্তানে যুদ্ধ নিয়ে চেতন আনন্দের “হিন্দুস্থান কী কসম”ছবিতে। সহ অভিনেতা হিসাবে পান চেতন আনন্দ,বিজয় আনন্দ,রাজ কুমার, বলরাজ সাহানির মতো অভিনেতাদের। ছবি হিট হয় এবং মদন মোহন এর সুরে একটি গান কালজয়ী হয়। তবে “জয়ন্ত”-এর বড় ছেলের খোঁজ কেউ রাখেননি ….
এবার আসল কথায় ফিরি….
সিপ্পী হাউজ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের নতুন ছবির ভিলেনকে।সেলিম খান যিনি এই ছবির সহ লেখক ও সহ চিত্রনাট্যকার তিনি ‘হিন্দুস্থান কি কসম’ দেখে মার্ক করলেন সেই ছেলেটিকে। রমেশ সিপ্পীকে বলে একটু সময় চাইলেন। সেলিম খান নিজে যোগাযোগ করলেন পুরো ঘটনা বললেন এবং উদ্যোগ নিলেন কিভাবে তাকে এই চরিত্রে ফিট করা যায় । নিজেদের আঁকা চরিত্র ক্যানভাসে ফোটাতে চাইলেন।পড়তে দিলেন তরুণ ভাদুড়ি মানে জয়া ভাদুড়ির বাবার লেখা চম্বলের ডাকাতদের নিয়ে লেখা “অভিশপ্ত চম্বল” বইটি। “অ্যায় মেরে বতনকে লোঁগো” নাটকে আমজাদ খানের অভিনয় দেখে গব্বর সিং চরিত্রের জন্য তাঁকে জাভেদ আখতারও পছন্দ করেন । সাতদিন পর রমেশ সিপ্পী ড্যানী-র বিকল্প ভিলেন সঙ্গে মিট করলেন ও মুগ্ধ হলেন। কর্নাটক যাবার আগে ভরা হাউসে সকলের সামনে সেই বিকল্প অভিনেতাকে বলতে হল সেই বিখ্যাত ডায়লগ সঙ্গে নিজস্ব ম্যানারিজম “সো যা নেহি গব্বর আ জায়ে গা”। আসমুদ্র হিমালয় পাগল হয়ে গেল গব্বর সিং ওরফে আমজাদ খানের উপর। “শোলে” হিন্দী ছবির ইতিহাস সৃষ্টি করল। আর আমজাদ খান নিজের প্রচেষ্টায় খ্যাতির উর্দ্ধ সীমায় পৌঁছে গেলেন।
“জঞ্জীর” সুপারডুপার হিট। বলিউড এক ‘অ্যাঙরি ইয়ং ম্যান’ পেল। প্রেম তখন তুঙ্গে অমিতাভ জয়া-র। সর্বত্র দেখা যায় জোড়ায় জোড়ায় । সালটা ১৯৭৩-এর এপ্রিল মে মাস, শোলের স্ক্রিন টেস্ট হয়ে গেছে, প্রি-প্রোডাকসানের কাজ হচ্ছে ।শুটিং ভালো করে শুরুর আগেই ৩রা জুন ১৯৭৩ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন অমিতাভ জয়া। রমেশের মুখে ছায়া পড়ল, ঠিক মাস খানেক পর অমিতাভ নিজেই বললেন ‘Jaya is pagnent’। অমিতাভ নিজের সংযম রাখতে পারেন নি। পুরো শুটিং টাই জয়া পেগনেন্ট অবস্থায় করেছেন। ১৭ মার্চ ১৯৭৪ তাদের প্রথম কন্যা শ্বেতার জন্ম হয়। নিন্দুকেরা অবশ্য অন্য কথা বলেন।
বেসিক গল্প হল জয় (অমিতাভ), বীরু(ধর্মেন্দ্র), দুই চোর কে ঠাকুর(সঞ্জীব কুমার), ডাকু গব্বর সিং এর উপর প্রতিশোধের জন্য ভাড়া করে রামগড় গ্রামে নিয়ে। টাঙ্গাওয়ালী ‘বাসন্তী'(হেমা মালিনী)-এক প্রাণোচ্ছ্বল, নারী আর ‘রাধা’ (জয়া ভাদুড়ি) স্বামীহারা ট্র্যাজিক নারী। ছবিতে সেই সময় খরচ হয় তিন কোটি টাকা। ছবিটি রিলিজ হওয়ার সময় প্রযোজক জি. পি. সিপ্পি পড়ে যান মহা ফাঁপড়ে। নিজের সবটুকু লাগিয়ে ছিলেন ছবিতে।কোনও সিনেমা হলের মালিক কিনতে চাই ছিলেন না ছবি। কি করে কিনবেন? এত দাম দিয়ে ছবি কিনে কোনও হল মালিক রিস্ক নিতে চাননি। কোথাও চালাতে না পেরে, জি.পি সিপ্পি শেষ পর্যন্ত তাঁর এক বন্ধু হল মালিককে প্রায় বাকিতে এই শর্তে চালাতে দেন চললে তবেই টাকা। ছবিটা চালানোর প্রথমদিন মাত্র ১৪ জন দর্শক আসেন, দ্বিতীয়, তৃতীয় দিন, এমনকি দু’সপ্তাহ পর্যন্ত হল খালি লোক হয় না। সকলের মনে হয়েছিল, দিওয়ারের পর আবার শেষ দৃশ্যে দর্শক হয়ত অমিতাভকে মৃত দেখতে চাইছেন না। ফলে আবার শেষ দৃশ্য বদলানোর কথা না হয়। কিন্তু জয়া বচ্চন রাজি হননি। কারণ, আবার শুটিং এর ধকল নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।
দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে হল হাউসফুল হতে শুরু করে। সেই শুরু। তখন থেকে পরবর্তী দশ বছর যে হলেই এসেছে ‘শোলে’, সেখানেই থেকেছে হাউসফুল। আজ পর্যন্ত বিভিন্ন হলে ‘শোলে’ চলে আসছে।
আরো কিছু অজানা তথ্য
সেলিম খানের বাবা (শ্বশুর) বলদেব সিং চরকের নামে সঞ্জীব কুমারের চরিত্রের নাম রাখা হয় ঠাকুর বলদেব। ছবিতে সঞ্জীব কুমারের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন শরমন যোশির বাবা অরবিন্দ যোশি।
পারিশ্রমিক হিসেবে শচীন একটি রেফ্রিজারেটর পেয়েছিলেন।
টানা ২০ দিন ধরে শুটিং চলেছিল ট্রেন ডাকাতির দৃশ্যের।
ছবিতে দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুস্তাক মার্চেন্ট। প্রথমটি ট্রেন ড্রাইভারের চরিত্রে। অপরটি সেই পার্শি ভদ্রলোকের চরিত্রে, যাঁর মোটর সাইকেল জয় আর বীরু চুরি করে।
সাম্ভা’র চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ২৭ বার বম্বে থেকে ব্যাঙ্গালোরে যাতায়াত করেন ম্যাকমোহন। গোটা ছবিতে যাঁর একটাই আইকনিক ডায়লগ ছিল, “পুরে পচাশ হাজার”।
“মেহবুবা মেহবুবা’ গানটি গাওয়ার কথা ছিল মান্না দে’র। অনেক আবার বলেন আশাজির গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর.ডি.বর্মনের গলায় রেকর্ড হওয়ার পর তা এতই পছন্দ হয় মান্না দে-র যে উনি নিজেই বলে দেন, ওটাই চূড়ান্ত।
শোলে-র হীরক জয়ন্তী উপলক্ষ্যে ছবির মূল চরিত্রাভিনেতাদের সোনার ব্রেসলেট উপহার দেন জি.পি.সিপ্পি।
কয়েন টস করার দৃশ্যের জন্য বানানো হয়েছিল ছ’টি বিশেষ কয়েন।
প্রায় ২০ দিন লেগেছিল সূর্যাস্তের পর রাধার (জয়া বচ্চন) লন্ঠন জ্বালানোর দৃশ্যের শ্যুট করতে। কিন্তু ছবিতে তা ছিল মাত্র দু’মিনিট।
ছবি রিলিজের পর থেকে জগদীপ-এর নাম হয়ে যায় সুরমা ভোপালী।
ছবির কাজ সম্পূর্ণ হতে লেগেছিল মোট আড়াই বছর।
সম্প্রতি বছর কয়েক আগে ‘শোলে’র 3D ভার্সান মুক্তি পেয়েছে।
শোলের সুর করে ছিলেন রাহুল দেব বর্মন গান গেয়ে ছিলেন কিশোর কুমার, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, রাহুল দেব বর্মন।ভূপিন্দর সিং, আনন্দ বক্সীও গান গেয়ে ছিলেন তবে সেটি ছবির দৈর্ঘ্যের কারণে বাদ যায়। চিত্রগ্রহন করে ছিলেন Dwarka Divecha, এডিট করে ছিলেন M.S.Shinde, আর্ট ডিরেক্টর ছিলেন Ram Yadekar.
সারা ভারতে শোলে (বাংলা বাদে) মুক্তপায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিন্তু বাংলায় মুক্তি পায় ঐ বছর পুজোর সময় মানে অক্টোবর মাসে। এখনকার মতো তখন এক সাথে ছবি মুক্তি পেত না।
শোনা যায় প্রথম যখন “শোলে” মুক্তিপায় দুবার বিরতি হত। পরে ছবির দৈর্ঘ্য ছোট করা হয়। আরো শোনা যায় বর্ধিত অংশে ছিল আমজাদ খান কেন ডাকাত হলেন ।
আগে বড় ছবির মুক্তি পেলে এক সপ্তাহ ধরে বড় বড় হাউসে পরিচালক ও প্রযোজক কিছু অবজারভার নিয়োগ করতেন তাদের কথার ভিত্তিতে ছবি দীর্ঘতা হ্রাস করা হতো ।শোলেতে “চাঁদ সা কোই চেহেরা” কিশোর কুমার মান্নাদে ভূপিন্দর ও আনন্দ বক্সীর একটি গান ছিল ছবির দৈর্ঘ্যের কারণে বাদ সেটি বাদ যায় ।
শোলেই প্রথম ছবি যার জন্য POLYDOR রেকর্ড প্রকাশ করেন ৩টে LP RECORD এর সেট :THE GREATEST RECORD EVER MADE”. ‘শোলের’ ডায়ালগ নিয়েই রেকর্ড বাজারে বেরিয়েছিল এবং তার বিক্রি অভূতপূর্ব রেকর্ড তৈরি করেছিল। শোলেই প্রথম ছবি যার জন্য POLYDOR রেকর্ড প্রকাশ করে সাপ লুডোর আদলে গেম এবং রেকর্ড এর সঙ্গে বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
শোলে প্রথম ছবি যার জন্য এন্টারটেনমেন্ট পার্ক তৈরি করার কথা হয়েছিল ।
কর্নাটক-এর রামান্না গ্রামে শুটিং হয়ে ছিল শোলের। নাম রাখা হয়ে ছিল রামগড়। সম্প্রতি কর্নাটক সরকার ও রমেশ সিপ্পি মিলে শোলে এন্টারটেনমেন্ট পার্ক (শোলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থিম প্রোজেক্ট) তৈরি করবেন ঠিক করেন। সেটি এবার বন্ধ হল। এই গ্রামের (বেহর) সাতটি পাহাড় এবং জঙ্গল নিয়ে এই প্রোজেক্ট ছিল । যেখানে থ্রিডি এফেক্টে দেখা যাবে শোলের বিভিন্ন দৃশ্য। 2005 সালে বিলুপ্তির পথে চলা ভারতীয় শকুন (গ্রেট ইন্ডিয়ান ভালচার) এবং হোয়াইট রাম্পড ভালচার। এদের সংরক্ষণের জন্য কর্নাটক সরকার এই গ্রামটি ও তার নিকটবর্তী পাহাড় জঙ্গল বেছে নিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার রামান্না গ্রামের রামদেওড়া পাহাড় সহ 100 কিমি দীর্ঘ আর 50 কিমি প্রস্থের বনাঞ্চলকে জাতীয় শকুন অভয়ারণ্যের মর্যাদা দেয়। গব্বর সিংহ-এর ডেরা সহ রামগড় এখন শকুন সংরক্ষণ কেন্দ্র।
এই প্রথম কোনও হিন্দি ছবির অ্যাকশন সিকোয়েন্স পরিচালনা করেছিলেন ব্রিটিশ টেকনিশিয়ানরা।
‘শোলে’ প্রথম হিন্দি ছবি, যার এডিটিং হয়েছিল ব্রিটেনে।
‘শোলে’ প্রথম হিন্দি ছবি, যা দেখানো হয়েছিল ৭০ মিলিমিটারের জায়ান্ট স্ক্রিনে। ১৯৭৫ সালে তিন কোটি টাকার বাজেটের ছবির শুধু ভারতেই ব্যবসা হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকার। রাশিয়ায় ব্যবসা করেছিল ৬ কোটি টাকার। দিল্লির ‘প্লাজা’ এবং কোলকাতার ‘জ্যোতি’ সিনেমায় শোলে চলেছিল একটানা দু’বছরেরও বেশি। সব মিলিয়ে ‘শোলে’ ভারতীয় হিন্দি সিনেমার জগতে এক ক্ল্যাসিক এবং ঐতিহাসিক ছবি হয়ে রয়ে গিয়েছে।
ড্যানীর ধর্মাত্মা মুক্তি পেলে সাফল্য পেল তবে শোলের তুলানায় খুবই কম। ড্যানী শোলের আগে একই রকম গল্প নিয়ে ফিরোজ খানের “খোট্টে সিকে” অভিনয় করেন তবে ভিলেন নয় । আবার শোলের ঠিক ১০বছর(১৯৮৫) পরে বি. সুভাষ পরিচালিত
“আঁধী তুফান” (আধুনিক শোলে) ছবিতে অভিনয় করার জন্য ডাক পান ড্যানি আর শত্রুঘ্ন সিনহা। একবার ছেড়ে যে ঐতিহাসিক ভুল করেছে তা এবার আর নয়। তাই আর সুযোগ ছাড়েননি। সঞ্জীব কুমারের বিকল্প শশি কাপূর, ধর্মেন্দ্রের বিকল্প মিঠুন চক্রবর্তী, অমিতাভ বচ্চনের বিকল্প শত্রুঘ্ন সিন্হা, ঘোড়ার বিকল্প বাইক আর আমজাদ খানের বিকল্প ড্যানী। হায় রে ভাগ্য ছবিটি চলে নি।
তবে এটা অনস্বীকার্য যে ড্যানীর জন্যেই আমজাদ খান শোলের গব্বর সিং হতে পেরে ছিলেন । ড্যানী নিজেও একটা নজির বিহীন ঘটনা ঘটালেন এবং প্রমাণ করলেন তার কাছে কথার দাম সবার আগে।
পুরস্কার >>
শোলে ভারতে এবং ভারতের বাইরে বহু পুরস্কার পেয়েছে ।
১৯৭৬ সালে ২৩তম Flimfare Award-এ nomineted হয়ে ছিল সবকটি বিভাগে কিন্তু শুধু এডিটিং জন্য M. S. Shinde পুরস্কার পেয়ে ছিলেন ।
এই বাংলা থেকে BFJAA পুরস্কার পেয়ে ছিল শোলে
Best Actor আমজাদ খান
Best Cinematography Dwarka Divecha
Best Art Director Ram Yadekar
এছাড়াও শোলে ৫০তম Filmfare Awardsএ পেয়ে ছিল Special Award for Best Flim for completing 50 years.
শোলে’র কিছু হিট ডায়লগ
< আসরানি >
* আধে ইধার যাও, আধে উধার যাও, বাকি মেরে সাথ
* হাম আংরেজ কে জমানে কি জেলার হ্যায়।
< আমজাদ >
* কিতনে আদমি থে
* ইয়ে হাথ মুঝে দে দে ঠাকুর।
* আব গোলি খা।
* বহুত ইয়ারানা লগতা হ্যায়।
* শো যা, নেহি তো গব্বর আ যায়েগা।
< অমিতাভ বচ্চন >
* ‘তুমহারা নাম ক্যা হ্যায় বসন্তী?
* ….. পহেলিবার শুনা ইয়ে নাম।
< হেমা মালিনী >
* আপনে পুছা তো বতা হি দেতি হুঁ, মেরা নাম বসন্তী
* কিউকি য্যাদা বাত করনে কি আদত তো মুঝে হ্যায় নেছি।
* চল ধন্নো, আজ বসন্তী কি ইজ্জত কা সওয়াল হ্যায়।
< ধর্মেন্দ্র >
* চাক্কি পিসিং ….. অ্যান্ড পিসিং …. অ্যান্ড পিসিং …….