পিকুর স্বপ্ন

তন্ময় হাজরা
গ্রামের নাম গঙ্গাধরপুর, জেলা বীরভূম। বাংলার গ্রাম। গ্রাম বাংলার যে চিত্রপট ছোটদের আঁকায় ফুটে ওঠে একদম সেইরকম গ্রাম বলা যায়। এই মহাদেবের নাম যুক্ত গ্রামটিকে। গ্রামের এক প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে অজয় নদ। দিগন্তবিস্তারী ধানক্ষেত যেমন আছে তেমনি আছে বাঁশবন কলাবন পুকুর কাঁচা মাটির পথ পানের বরজ কাঁচা বাড়ি ধানের গোলা আর একটা শিব মন্দির। তবে শহরে ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটা পাকা বাড়ি দোকান টেলিফোন বুথ গ্রামের এক প্রান্তে মোবাইল টাওয়ার ও বসতে শুরু করেছে। তাই পিকুর খুব আনন্দ। বাবা একটা মোবাইল ফোন কিনবে বলছিল তো সেদিন মাকে। পিকু এই গ্রামেই থাকে। বয়স এখন ১২ হবে। এইতো ক্লাস সিক্সে উঠল। গ্রামের স্কুলে পড়ে। গঙ্গাধরপুর উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনায় সে ভীষণ ভালো। গ্রামের প্রতিটি মানুষ তাকে চেনে এবং খুব ভালোবাসে। শুধু পড়াশোনায় ভালো বললে অনেক কম বলা হবে পিকুর ব্যাপারে। সে যেমন ভালো ফুটবল খেলে তেমনই ভালো ছবি আঁকে। পিকুর বাবা শহরে চাকরি করেন। বাড়িতে আছে দাদু ঠাকুমা আর মা। মা-ই তার বন্ধু তার শিক্ষিকা তার পথপ্রদর্শক। বাবা বাড়ি আসেন শনিবার আবার চলে যান সোমবার। বাবার ব্যাংকে চাকরি। দাদুই হলো তার কাছে জ্ঞানভান্ডার। এই বিশাল বিশ্বকে পিকুর মনের দরজায় এনে খাড়া করেছেন তার দাদু বিভূতিভূষণ হালদার। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এই গ্রামের স্কুলেই আজীবন শিক্ষকতা করে গেছেন। আর সেই স্কুলেরই ছাত্র হয়েছে পিকু। দাদু ছিলেন সংস্কৃতের শিক্ষক কিন্তু ইতিহাস ভূগোল বিজ্ঞান ইংরেজিতে তার অগাধ জ্ঞান। যদিও অংক জিনিসটা তিনি বলেন নাকি বড় খটোমটো। তাই তার মোটেও পছন্দ নয় এই বিষয়টি। দাদুর কাছে বসে শোনে আমেরিকা আফ্রিকা এইসব দেশ, সেখানকার মানুষ জনের কথা। বিজ্ঞানের কত রকম আবিষ্কার। কলকব্জা মহাকাশে চাঁদ-তারা। ভারতের গল্প এদেশের পাহাড়-নদী মরুভূমি মন দিয়ে শোনে কিন্তু মুখ হা করে দাদু বললে একটু হেসে মুখ বন্ধ করে। বিকেলে নদীর পাড়ে মাঠে ফুটবল আর স্কুল ছুটি থাকলে তো কথাই নেই সকাল সকাল পড়া সেরে নিয়ে বেলা থেকে খেলা শুরু খেলা শেষে বন্ধুদের সাথে নিয়ে কাঁচা আম কখনো আমড়া। তারপর নদীতে সাঁতার আর স্নান।
এখন গ্রীষ্মের গরম চলছে, গ্রামে গরমের ঝাঁজ বেশ কম। চারিদিকে গাছপালায় তো তারা নিঃশ্বাসের ছাড়ছে জল। সেই জলে বাতাস ঠান্ডা ভিজে ভিজে এসব সে বইয়ে পড়েছে। তবে তার অনেক আগে দাদু তাকে বলেছে গাছেদের কথা পাখপাখালির জন্তু জানোয়ারদের সব কীর্তিকলাপ। আর ঠাকুমা তার কাছে সত্যিই ঠাকুরমার ঝুলি। রামায়ণ মহাভারত শিব দুর্গা রাজকুমারী পরী কি নেই সেই ঝুলির ভেতর। গালে এক খিলি পান গুঁজে দু-পা ছড়িয়ে তার চলে সুপারি কাটা সামনে পিকু হাঁ করে বসে শোনে সব গল্প। চওড়া লাল পাড় সাদা শাড়িতে ঠাকুরমা যেন সাক্ষাৎ মা সারদা দেবী। ঠাকুমার হাতের সর্ষে ইলিশ মালপোয়া কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায় ওঠাম মি আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছে। একগাল হেসে ঠাকুমা আদর করে কোলে বসিয়ে নেয় আচ্ছা দাদুভাই কালই করে দেবো।
আজ গরমটা কেমন ভ্যাপসা রাতে বিছানায় মার পাশে শুয়ে ছটফট করে। সারাদিন খেটে মায়ের ক্লান্ত মুখে শান্তির ঘুমে আবেশ বিছানা থেকে সাবধানে নামে। বাজে প্রায় রাত এগারোটা। গ্রামেগঞ্জে দরজা খুলে ওদের বাড়ির পাশে কলা আমের বাগান পেছনটা আর সামনে একটু মাঠ মত তারপর যতদূর চোখ যায় ধানের ক্ষেত আজ পূর্ণিমা না হলেও চাঁদের আলোর চারদিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ পিকু দেখল তাদের বাড়ি থেকে হাত ৫০ দূরে একটা রুপালি রঙের গোল কি মাঠের মাঝে পড়ে আছে। চাঁদের আলোয় চকচক করছে। ছোট হলে কি হবে পিকুর সাথে তুলনা হয়না ডাকাবুকো ছেলে। ভাবলো কাছে গিয়ে একবার দেখতে হচ্ছে জিনিসটা কি যেমন ভাবা তেমন কাজ।