August 21, 2025

মসির ধারায় অসির ধার (২৩)

সঞ্জীব মুখার্জী 

“Leadership is capability of solving problems. The day soldiers stop bringing you their problems is the day you have stopped leading them. They have either lost their confidence that you can help or they have concluded that you do not care. Either is a failure of leadership.”

 Colin Powell

সময়টা ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ এবং একটি বিশেষ দিন। দিনটিকে বিশেষ দিন এইকারণে বলবো যেহেতু এইদিনে আমাদের ব্যাটালিয়নের পোস্টিং অর্ডার এসে গিয়েছিলো। আমাদের পুরো ব্যাটালিয়নকে পাঞ্জাবের পাট চুকিয়ে দিয়ে ‘পার্মানেন্টলি’ অন্য এক জায়গায় চলে যেতে হবে।  নতুন জায়গা যেখানে আমাদের ‘ব্যাটালিয়ন পোস্টিং’ যাচ্ছে তার নাম হলো “কুপুপ”, সুদূর সিকিম রাজ্যের একপ্রান্তে “ভারত-চীন” সীমান্তে, যেখানে আমাদের স্থায়ী ভাবে প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর থাকতে হবে। সেখানে যেতে গেলে সিকিমের রাজধানী শহর “গ্যাংটক” হয়ে যেতে হবে, আর যে জায়গাতে আমাদের ব্যাটালিয়ন যাচ্ছে সে জায়গাটি বছরের তিনটি মাস যথাক্রমে জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর ছাড়া প্রায় সারাটি বছর বরফে আবৃত থাকে। সেই মাসগুলোতে তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রী থেকে মাইনাস ১০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। বাকী মাসগুলোতে অর্থাৎ জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং অনবরত বৃষ্টিপাত হয়। এটা হলো মোটামুটি সেখানকার জলবায়ু। ভৌগোলিক পরিস্থিতি বলতে “কুপুপ” সমুদ্রতল থেকে অনেক অনেক উঁচুতে অবস্থিত, অন্ততঃপক্ষে ১৬,০০০ ফুট উঁচুতে। সেইজন্য তাকে “হাই অল্টিটুড” এরিয়া বলা হয়।  সেই সময় না মোবাইল ছিল আর না ছিল ইন্টারনেট, তাই পাঞ্জাবে বসে সিকিমের আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক পরিস্থিতির সম্বন্ধে বিশেষ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না। তবুও আমাদের ব্যাটালিয়নের পোস্টিং অর্ডারে যা কিছু বিবরণ দেওয়া ছিল তারই থেকে কিছুটা আপনাদের বললাম। বাকি সবকিছু সেখানে পৌঁছলেই দেখতে পাবো। নুতন জায়গায় পোস্টিং যাওয়ার একদিকে আনন্দ যেমন আছে আরেকদিকে তেমনি কষ্টও আছে। আনন্দটা হলো একটা নতুন জায়গা দেখতে পাওয়ার, নুতন জায়গার নুতন ধরণের লোকেদের সম্বন্ধে জানতে পাড়ার আনন্দ, আনন্দটা হলো এক আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে আর এক আন্তর্জাতিক সীমান্তে থেকে দেশের এবং দেশবাসীর রক্ষার জন্য নুতন দায়ীত্ব পাওয়ার আনন্দ। আর কষ্টটা হলো পুরোনো জায়গায় একটা লম্বা সময়ধরে থাকতে থাকতে সে জায়গার সম্বন্ধে সুপরিচিতি পেয়ে যায় আর তার সঙ্গে সে জায়গার প্রতি, সেখানকার লোকজনের প্রতি একটা মায়া পড়ে যায় আর তাই তাদেরকে ছেড়ে স্থায়ীভাবে যখন অন্য কোথাও যেতে হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই একটু মনঃকষ্ট হয়। মিলিটারীতে সাধারণতঃ দুই ধরণের পোস্টিং সিস্টেম হয়। একটা হলো ইন্ডিভিজুয়াল পোস্টিং, যাতে কোনো এক সৈনিক ব্যক্তিগতভাবে এক ব্যাটালিয়ন থেকে অন্য ব্যাটালিয়নে তার নিজস্ব জিনিসপত্রের সাথে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। অপর পোস্টিংটা হলো ব্যাটালিয়ন পোস্টিং, যাতে একটি ব্যাটালিয়নের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং যত সৈনিক সেই ব্যাটালিয়নে আছে তাদের সকলকে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রস্থান করতে হয়। সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় সম্পূর্ণ লট-বহর, অস্থাবর সামরিক এবং অসামরিক উপকরণ, যাকে বলে “লক, স্টক, ব্যারেল”, কেবল স্থাবর জিনিসগুলোকে ছেড়ে যেতে হয়, আদপে সেই সমস্ত স্থাবর জিনিসগুলোকে আমাদের লোকেশনে আগত অন্য আর এক নতুন ব্যাটালিয়নকে হস্তান্তর করে দিয়ে যেতে হয়। পাঞ্জাব থেকে আমাদের ব্যাটালিয়নের সম্ভাব্য যাওয়ার দিন নির্ধারিত হলো সেই বছরের অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে। যেতে হবে একটি স্পেশাল ট্রেনে। যখন সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন দূরে কোথাও স্থায়ীভাবে পোস্টিং যায় তখন ভারত সরকারের রেল মন্ত্রক থেকে একটা গোটা ট্রেনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।  সেই ট্রেনে নানান ধরণের কোচ, ওয়াগন ইত্যাদি থাকে।  যাকে বলে “আর্মি স্পেশাল ট্রেন”।  রাস্তায় যেতে যেতে রান্না-বান্না, স্নান খাওয়া, ইত্যাদি সব রকমের কাজকর্ম ট্রেনেই সম্পন্ন হয়।

ততদিনে আমাদের পুরোনো ব্যাটালিয়ন কমান্ডার কর্নেল সুদান অন্য কোথাও ইন্ডিভিজুয়াল পোস্টিং চলে গেছেন, আর তাঁর জায়গায় এসেছেন নতুন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার। নবাগত ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের নাম কর্নেল ধ্যান সিং শেরগিল, সংক্ষেপে কর্নেল ডি এস শেরগিল।  তাঁকে নবাগত বলাটা ভুল হবে কেননা যখন কর্নেল সুদান আমাদের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ছিলেন তখন কর্নেল শেরগিল সেকেন্ড-ইন-কমান্ড-এর পদে ছিলেন। কর্নেল সুদানের অন্যত্র পোস্টিং চলে যাওয়ার পর কর্নেল শেরগিলের ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের পদে পদোন্নতি হয়ে যায়।  ব্যাটালিয়নের প্রতিটি সৈনিককে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে জানতেন এবং চিনতেন। ব্যাটালিয়নের প্রতিটি সৈনিকও কর্নেল শেরগিলের স্বভাব এবং তাঁর পছন্দ অপছন্দ জানতো। দৃঢ়চেতা, নির্ভীক, সৎ এবং কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন কর্নেল শেরগিল। আর সবার উপরে তিনি ছিলেন খুব হাস্যরসিক। ব্যাটালিয়নের কোনো সৈনিকের কোনো কষ্ট বা সমস্যা হলে কর্নেল শেরগিলকে বিচলিত হতে দেখা যেত। আর যতক্ষণ না সেই সৈনিকের সমস্যা সমাধান করে ফেলতে পারতেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি ক্ষান্ত হতেন না। শুধু তাই নয়, সৈনিকদের সমস্যা ছাড়া ব্যাটালিয়নের অন্য কোনো সমস্যা হলে তারও সমাধান উনি তুড়ি মেরে করে দিতেন। এই কারণে, পুরো ব্যাটালিয়নে কর্নেল শেরগিলকে “Trouble Shooter” বলে অভিহিত করা হয়েছিল। তবে তাঁর গম্ভীর ব্যক্তিত্বকে সমীহ করে চলতো ব্যাটালিয়নের সবাই। মিথ্যাকে তিনি কোনোদিনই প্রশ্রয় দিতেন না। কথায় কথায় কর্নেল শেরগিল বলতেন, “আমি খুন করাটাও মাফ করে দিতে পারি কিন্তু মিথ্যেকে নয়।” কেউ তাঁকে মিথ্যে কথা বলতোও না আর বলার প্রয়োজনও হতো না। সব মিলিয়ে দারুন লোক ছিলেন কর্নেল শেরগিল। এহেন কর্নেল শেরগিল আমাদের ব্যাটালিয়নের পোস্টিং অর্ডারটা এসে যাওয়ার পর একদিন ফুটবল গ্রাউন্ডে সকলকে একত্রিত করে কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক করে দেন এবং নির্দেশ দেন। বিশেষ করে আমাদের জায়গায় ফাজিলকায় যে নতুন ব্যাটালিয়ন আসছে তাদেরকে যেন আমরা সম্পূর্ণরূপে সহযোগীতাপূর্বক সমস্ত স্থাবর জিনিসপত্র যা এতদিন আমাদের ব্যাটালিয়নের জিম্মায় ছিল তা হস্তান্তর করে দিই। আর আমাদের ব্যাটালিয়ন ট্রেনে করে সিকিম অভিমুখে রওনা হওয়া থেকে আরম্ভ করে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের ব্যাটালিয়নের নতুন লোকেশনে পৌঁছায় ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের নিয়মানুবর্তীতার মধ্যে যেন তিলমাত্র খুঁত না থাকে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। নতুন লোকেশন আর নতুন আন্তর্জাতিক সীমান্ত তাও আবার ভারত-চীন সীমান্ত। আর সব চাইতেযে বিষয়টাতে কর্নেল শেরগিল গুরুত্ব দিচ্ছিলেন সেটা হলো আমাদের ব্যাটালিয়নের সুনাম। কর্তাব্যপরায়ণতার এবং সুদক্ষতার জন্য অর্জিত যে সুনামের সঙ্গে পাঞ্জাব ছেড়ে সিকিমে নুতন জায়গায় আমরা যাচ্ছি তাকে যেন বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন না করে তাকে আমাদের বহাল রাখতে হবে, বরং নুতন লোকেশনে আমরা আমাদের এই সুনামের স্তর আরো কি করে উঁচু করতে পারি সে ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমাদের ব্যাটালিয়নের গৌরবমন্ডিত ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি আমরা সবাই দিয়েছিলাম কর্নেল শেরগিল কে।  আর এও বলেছিলাম, “প্রাণ জায়ে পর বচন না জায়ে”। এই সমস্ত কথার মধ্যে কর্নেল শেরগিল আমাদের সকলকে নির্দেশ দেন আমরা আমাদের পরিবারকে নিজের নিজের বাড়িতে রেখে আসি। সিকিমে যেখানে আমরা যাচ্ছি সেটা ফিল্ড এবং হাই অল্টিটুড এরিয়া তাই সেখানে পরিবারকে সঙ্গে রাখার কোনো ব্যবস্থা বা অনুমতি নেই। তাছাড়া ফাজিলকার যে সমস্ত ফ্যামিলি কোয়ার্টার আমাদের হেফাজতে ছিল সেগুলোকে আমাদের নতুন ব্যাটালিয়নের হাতে সুচারু রূপে তুলে দিতে হবে।

১৯৯৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি করে আমি ফাজিলকা থেকে জবাকে নিয়ে আর হাঁড়ি কড়াই বাসন পত্র ইত্যাদি সঙ্গে করে একটি ভালো দিন দেখে একটি ভালো ট্রেনে রিজার্ভেশন করিয়ে সিউড়ি অভিমুখে পা বাড়ালাম। কোয়ার্টারে থাকতে থাকতে এক এক করে এতো জিনিসপত্র হয়ে গিয়েছিলো তার টেরটিও পাইনি। সেটা বুঝতে পারলাম যখন জবাকে বাড়িতে রেখে আসতে গেলাম। তবে সৌভাগ্যবশতঃ ট্রেনটা যখন লুধিয়ানা পৌঁছলো তখন লুধিয়ানাতে আমাদেরই কম্পার্টমেন্টে একটি বাঙালি ছেলে উঠলো। কথায় কথায় জানতে পারলাম ছেলেটি মুর্শিদাবাদের কোনো এক স্থানের এবং আর্মিতেই চাকরি করে তবে অন্য কোনো ব্যাটালিয়নে এবং তাকে তার বাড়ি সিউড়ি হয়েই যেতে হবে। আমি তো হাতে চাঁদ পেলাম। লুধিয়ানা থেকে আসানসোল স্টেশন পর্যন্ত ছেলেটির সাথে বেশ ভাল আলাপ হয়ে গেলো। সত্যি কথা বলতে কি ছেলেটি আমাদের জিনিসপত্র নামাতে ওঠাতে অনেক সাহায্য করলো। এমনকি আমাদের বাড়ি পর্যন্ত সে ছেড়ে দিয়ে গেলো। আমরা দুপুর বেলায় বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলাম।  তাই ছেলেটিকে আমাদের বাড়িতে লাঞ্চ করার অনুরোধ করে তাকে লাঞ্চ করিয়ে তবে তাকে পাঠালাম। এদিকে বাড়িতে বাবা মা এবং আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এতদিন পর আমাকে এবং বিশেষ করে জবাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশি। সিকিমে আমাদের ব্যাটালিয়নের পোস্টিং অর্ডারের ব্যাপারে বিস্তারিত সব কিছু বাবা, মা, ঠাকুরমাদের জানিয়ে বললাম যে এখন জবা বাড়িতে তোমাদের কাছে থাকবে। তা শুনে বাবা মা ঠাকুরমা সকলে ভীষণ খুশি। কিন্তু আমার মনটা বেশ খারাপ করছিলো। জবাকে দেখেও মনে হচ্ছিলো যে সেও বেশ মনমরা। জবা আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে দিতে দিতে আমাকে বার বার বলছিলো যে একটু সাবধানে থেকো আর শরীরের যত্ন নিও, যেটা স্বাভাবিক ভাবে হয়ে থাকে। আমি জবার মনোঃকষ্টটাকে একটু লাঘব করে দেওয়ার জন্য বারংবার তাকে কোনোরকম দুশ্চিন্তা না করতে বলছিলাম আর আশ্বাস দিচ্ছিলাম যে তাড়াতাড়ি ছুটি আসার চেষ্টা করবো বলে। আর সেই সঙ্গে এটাও বলছিলাম যে পাঞ্জাবের থেকে তো বাড়ির কাছেই চলে আসছি কেননা সিকিম তো পাঞ্জাবের তুলনায় সিউড়ীর থেকে নিকটতর। যাইহোক, কিছু করার তো নেই, চাকরির ব্যাপার তাই সবকিছু সয়ে চলতে হবে। জবাকে বাড়িতে রেখে আসার জন্য পনেরো দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে ছুটি শেষ হয়ে গেলো। এবার আমার ফিরে যাবার পালা।

জবাকে বাবা মায়ের কাছে ছেড়ে যখন ফাজিলকায় ফিরলাম তখন জুলাই মাসের শুরুর দিক।  ফিরে দেখি আমাদের জায়গায় যে নতুন ব্যাটালিয়নটির আসার কথা ছিল সেও ইতিমধ্যে আমাদের লোকেশনে পৌঁছে গেছে আর আমাদের পুরো ব্যাটালিয়ন তখন ব্যস্ত তাদেরকে ফাজিলকার সবকিছু বুঝিয়ে দিতে আর তারসঙ্গে ব্যস্ত ফাইন্যাল গোছগাছ করতে। সিকিম রওনা দেওয়ার জন্য হাতে তখন গোনাগুন্তি দিন। আমিও লেগে পড়লাম সকলের সাথে।  এদিকে রেলওয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে কনফার্মেশন লেটার এসে গেলো যে আমাদের ব্যাটালিয়নের জন্য পুরো একটা ট্রেন দেওয়া হবে এবং সেটা ফাজিলকা রেল স্টেশনে ২৬ জুলাই ১৯৯৪ তারিখে এসে যাবে। আমাদের মোট দুই দিন দেওয়া হবে সেই ট্রেন লোডিং করার জন্য। তারপর ২৮ জুলাই আমাদের রওনা দিতে হবে।

সিকিমে রওনা দেওয়ার দিন যতই এগিয়ে আসছিলো প্রস্তুতি পর্বের তীব্রতা এবং ব্যস্ততা ততই বাড়ছিল। কখনো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত কাজ করে আবার কখনো দিনমানে কাজ করে। একদিকে আমাদের ব্যাটালিয়নের সম্পূর্ণ প্যাকিং আবার অন্যদিকে নবাগত ব্যাটালিয়নকে সেখানকার সবকিছু হস্তান্তর করে দেওয়া। লক্ষ্য একটাই ২৫শে জুলাই তারিখ, তার মধ্যেই কমপ্লিট করে ফেলতে হবে আমাদের প্যাকিং, দেওয়া নেওয়া সবকিছু, কারণ ২৬শে জুলাই ট্রেন দিয়ে দেওয়া হবে ফাজিলকা স্টেশনে, তারপর ওই তারিখেই ট্রেনে সবকিছু লোডিং করে দুই দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৮শে জুলাই রওনা দিতে হবে আমাদের সিকিম অভিমুখে। আর পিছনে তাকানোর উপায় নেই। আর্মি স্পেশাল ট্রেনটি ফাজিলকা থেকে রওনা দিয়ে আমাদের গন্তব্যস্থলে অর্থাৎ নিউ জলপাইগুড়িতে পৌঁছে দেবে।  ফাজিলকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যেতে ট্রেনের প্রোগ্রাম অনুযায়ী ৪ থেকে ৫ দিন লাগবে কেননা রাস্তায় কয়েকটি জায়গায় বেশ লম্বা সময়ের জন্য হল্ট দেবে, তাই একটু বেশি সময়ই লাগবে। নিউ জলপাইগুড়ি হলো সিকিম যাওয়ার জন্য নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে আমাদের সবকিছু  আনলোডিং করে ট্রেন খালি করেদিতে হবে। আর নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আমাদের ব্যাটালিয়নের নুতন লোকেশন “কুপুপ” পৌঁছতে হবে আর্মি কনভয় করে বাই রোড। কথামতো পূর্বনির্ধারিত দিনে অর্থাৎ ২৬শে জুলাই ট্রেন এসে গিয়েছিলো আর তাতে লোডিং করে ঠিক ২৮শে জুলাই ১৯৯৪ তারিখে দুর্গা দুর্গা করে রওনা দিলাম। অনেক কৌতূহল, অনেক উদগ্রীবতা নিয়ে কর্মজীবনের এক নুতন অধ্যায়ের সূচনার পথে রওনা দিলাম। কি জানি, জীবনের কোন নতুনত্ব, কোন বৈচিত্র তখন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তার গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসবো আপনাদের কাছে। ততদিন ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আর অবশ্যই দেখতে থাকবেন “জেলার খবর সমীক্ষা”। জয় হিন্দ।

 

ক্রমশঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *