মসির ধারায় অসির ধার (১৮)

সঞ্জীব মুখার্জী
“Winners embrace only hard work. They love the discipline of it and the trade-off they are making to win. Losers, on the other hand, see it as a punishment. And that is the difference.”
~ Lou Holtz
দিনটা ১৯৯২ সালের ১২ই জুলাই, সূর্য্যদেব তখন যেন ফাজিলকায় অগ্নিবর্ষণে মগ্ন। পাঞ্জাব এমনিতেই গরম জলবায়ুর এলাকা তারপর আবার ফাজিলকার অবস্থিতি রাজস্থানের শুষ্ক মরুভূমি সংলগ্ন হওয়াতে পুরো যেন ব্যাপারটা হয়েছে “সোনে পে সুহাগা” অর্থাৎ গোদা বাংলায় “গোদের উপর বিষফোঁড়া”। চারিদিকে ধূধূ করছে মাঠ আর হুহু করে অবিরত বয়ে চলেছে উত্তপ্ত বাতাসের তরঙ্গ যেটা আমাদের কাছে ‘লু’ বলে পরিচিত। অবশ্য এইকয়েক বছরে ফাজিলকায় থাকতে থাকতে সেখানকার আবহাওয়া আমাদের সকলের গা সওয়া হয়ে গিয়েছিলো। পাঞ্জাবে গরম জলবায়ু হওয়ার মুখ্য কারণ সেখানকার ভৌগোলিক অবস্থিতি, এছাড়াও আর একটা কারণ ছিল সেটা হলো পাঞ্জাব কৃষিপ্রধান রাজ্য আর সারা বছর কোনো না কোনো ফসলের চাষ সেখানে লেগেই থাকে, তাই জমির উর্বরতা যেন খর্ব না হয় সেজন্য প্রতিনিয়ত সমস্ত জমিতে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক উর্বরক অর্থাৎ সার আর ফলন্ত ফসলে কীটনাশক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়। সেই সমস্ত রাসায়নিক পদার্থের বিকিরণ এতটাই তীব্র যে তার ফলে চারিদিকের এলাকার বাতাবরণ ভীষণ ভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যাইহোক, ব্যাটালিয়নের সুচনাগৃহ থেকে সবাই নোটিশ দেখে নিয়েছে যে সেই বছরের আগামী মাসে অর্থাৎ ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসের ২২ তারিখ থেকে ‘মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে’ ‘ইন্টার ব্যাটালিয়ন ফায়ারিং কম্পিটিশন’ শুরু হবে আর সেটা চলবে প্রায় এক মাস ধরে। আসন্ন সেই কম্পিটিশনের নিরীখে আমাদের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার কর্নেল সুদান আদেশ জারী করেছেন যে সেই দিন অর্থাৎ ১২ই জুলাই বিকাল বেলায় পুরো ব্যাটালিয়নের সমস্ত সৈনিকদের একত্রিত হতে হবে। ব্যাটালিয়নের ফুটবল গ্রাউন্ডই তার জন্য বেছে নেওয়া হয়। কর্নেল সুদান ইন্টার ব্যাটালিয়ন ফায়ারিং কম্পিটিশন এর প্রস্তুতির ব্যাপারে কমপ্লিট ব্রীফিং দেবেন।
মহাজন হলো রাজস্থানের বিকানীর জেলায় মরুভূমিতে অবস্থিত একটি জায়গা আর সেখানেই গড়ে ওঠে ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ ‘ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ’। কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা এই ‘ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ’ প্রধানতঃ ব্যবহৃত হয় ইন্ডিয়ান আর্মি এবং ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের সমস্ত রকম বড় বড় অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষামূলক প্রক্ষেপন, প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা (টেস্ট ফায়ারিং, ট্রেনিং এন্ড কম্পিটিশন)। বড় অস্ত্রশস্ত্র বলতে যা বোঝায় তা হলো – এয়ার টু সারফেস মিসাইল, সারফেস টু সারফেস মিসাইল, সারফেস টু এয়ার মিসাইল, এয়ার বম্বার, বোফোর্স গান, আর্টিলারি গান, যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, রকেট লঞ্চার, রিকয়েল লেস গান, হাই বোরের মর্টার, মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার, ATGM অর্থাৎ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল ইত্যাদি। স্বয়ং আর্মি হেডকোয়ার্টার এবং এয়ারফোর্স হেডকোয়ার্টার নিজের তত্ত্বাবধানে এইসমস্ত প্রক্ষেপন, প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা গুলো পরিচালনা করেন। অনেকসময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয় এই ইভেন্ট গুলো মনিটর করে থাকেন। আর এই প্রতিযোগিতাগুলির নিপুণতা আর দক্ষতার ভিত্তিতে তৈরি হয় সমস্ত ইনফেন্ট্রি ব্যাটালিয়নের এবং আর্টিলারি ব্যাটালিয়নের রাঙ্কিং। প্রতিযোগিতায় যে যত নিপুন এবং দক্ষ তার স্কোর তত বেশি আর যার স্কোর যত বেশি আর্মি হেডকোয়ার্টারে তার প্রোফাইল তত মজবুত। এ হেন ফায়ারিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করা না শুধু একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার বরং তার থেকেও রয়েছে সমগ্র আর্মি সমাজে সুনাম অর্জন করার একটি মঞ্চ।
ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা পুরো ব্যাটালিয়নের সৈনিকরা পূর্ব নির্ধারিত সময়ে ফুটবল গ্রাউন্ডে খুবই নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে সারিবদ্ধ হয়ে একত্রিত হলাম। যথা সময়ে কর্নেল সুদানের “কম্যান্ডিং অফিসার” এর নেম প্লেট লাগানো গাড়িটি এসে দাঁড়ালো আর তার থেকে নেমে কর্নেল সুদান সমস্ত উপস্থিত সৈনিকদের অভিবাদন করলেন। তারপর শুরু হলো মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জের অভ্যগ্র ফিল্ড ফায়ারিং প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির ব্রীফিং। মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ আর ফাজিলকায় আমাদের ব্যাটালিয়ন লোকেশনের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার আর যে দূরত্ব অতিক্রম করতে ৪-৫ ঘন্টা লাগবে। পুরো ব্যাটালিয়ন মুভ করবে বিশাল এক মিলিটারি কাফেলা অর্থাৎ আর্মি কনভয় এর দ্বারা। ২২শে আগস্ট প্রতিযোগিতা শুরু তাই আমাদের সেখানে দুদিন আগে পৌঁছতে হবে কেননা সেখানে পৌঁছে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা প্রাথমিক টাস্ক অর্থাৎ তাঁবু খাটানো থেকে শুরু করে লঙ্গর স্থাপন। তারপর ঘুরে ঘুরে পুরো ফায়ারিং রেঞ্জ দেখা, ফায়ারিং রেঞ্জে অংশগ্রহণকারী গান গুলিকে সঠিক ভাবে স্থাপিত করা হলো পরবর্তী টাস্ক। এইসব কার্যসম্পাদন করতে অন্ততঃ পক্ষে দুই থেকে তিন সময় লাগবে তাই ঠিক হলো আমরা ১৯ তারিখ ভোরবেলায় আমাদের কনভয় রওনা দেবে যাতে করে সূর্যদেব মাথার ঠিক উপরে পৌঁছনোর আগেই আমরা মহাজন পৌঁছে যাই আর সেখানে গিয়ে অন্ততঃ তাঁবু খাটিয়ে থাকার জায়গা সুনিশ্চিত করে প্রখর রৌদ্রের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার ব্যবস্থাটা করতে পারি। ফিল্ড ফায়ারিং কম্পিটিশনের একমাসের সময়কালের মধ্যে প্রথম ১০ দিন ধার্য থাকবে প্রাকটিস ফায়ারিং বা রিহার্সালের জন্য। বাকি ২০ দিন ধরে চলবে প্রতিযোগিতা। তারপর প্রস্তুতির কার্যপ্রণালীর মধ্যে আর যে সমস্ত কার্যের উপর কর্নেল সুদানের জোর ছিল সেগুলো হলো অংশগ্রহণকারী বড় অস্ত্রশস্ত্র গুলির পূর্ব নিরীক্ষণ, রক্ষনাবেক্ষন, পরিচর্যা আর সাফ সাফাই। বড় অস্ত্রশস্ত্র গুলির ব্যবহার সাধারণতঃ দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ না লাগলে হয়না। আমরা এই কয়েকটা বছর কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি অপারেশন এবং ইন্টারনাল সিকিউরিটি ডিউটিতেই নিযুক্ত ছিলাম তাই এই ধরণের ডিউটি করতে পার্সোনাল উইপন যেমন রাইফেল, পিস্তল, হ্যান্ড গ্রেনেড, স্টেন গান, লাইট মেশিন গান ইত্যাদির ব্যবহার করা হয় এবং সাপোর্টিং উইপন অর্থাৎ বড় অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার হয় না। তাই অস্ত্রাগারে সেগুলি সযত্নে সংরক্ষিত ভাবে রাখা থাকে। তাদের পরিচর্যা যদিও পর্যায়ক্রমে হয়ে থাকে তবু ফিল্ড ফায়ারিং কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করার উপযুক্ত করে তুলতে সেগুলির প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়াটা প্রস্তুতিপর্বের একটি প্রধান অংশ। এছাড়া কর্নেল সুদানের স্বরসংঘাত ছিল যে বিষয়টির উপর সেটি হলো ফিজিক্যাল ফিটনেস। মরুভূমি এলাকা, প্রচন্ড দাবদাহ তার উপর প্রতিযোগিতায় উচ্চস্থান পাওয়ার তাগিদ। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা এমনিতেই ভীষণ চ্যালেঞ্জের ছিল তাই এই বিষম পরিস্থিতিকে জয় করতে আমাদের শরীরে আনতে হবে একটি উচ্চস্তরীয় সহনশীলতা আর সেটি আনতে প্রয়োজন হবে আমাদের কঠোর শারীরিক অনুশীলনীর।
এইসব কথা মাথায় রেখে ব্রীফিং এর সময় কর্নেল সুদান পরিষ্কার করে বলে দিলেন যে ঠিক পরদিন থেকে ১৮ই আগস্ট পর্যন্ত আমাদের উঠেপড়ে লাগতে হবে এইসমস্ত কাজে। কর্নেল সুদান এটাও বলেন যে সেইদিন থেকে যতদিন পর্যন্ত ব্যাটালিয়ন ফিল্ড ফায়ারিং কম্পিটিশন থেকে না ফিরছে ততদিন পর্যন্ত ব্যাটালিয়নের কোনো সৈনিক ছুটির জন্য আবেদন করবে না, যদি তা কেউ করে তাহলে সেই আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেওয়া হবে। তবে হ্যাঁ, কারোর বাড়িতে, ঈশ্বর না করুন, কোনো আপাতকালীন পরিস্থিতি অর্থাৎ ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন হলে তার ছুটির আবেদন বিবেচনা করা হবে। আমিও মনে মনে ঠিক করে নিলাম যে মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ থেকে ফেরার পর ছুটি গিয়ে আমার নববিবাহিতা বৌ জবাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবো। কোয়ার্টার তো আমাকে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েই গেছিলো তাই সেদিক থেকে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। আর তাছাড়া এখন যদি কর্নেল সুদানকে দিন কয়েকের ছুটির জন্য অনুরোধ করি তাহলে উনি হয়তো স্নেহাস্পদ হয়ে আমাকে নিরাশ করবেন না কিন্তু জবাকে নিয়ে আসার পরে পরেই আমি যদি ফায়ারিং কম্পিটিশনে যাই তাহলে কোয়ার্টারে জবার একার পক্ষে থাকাটা একটু অসুবিধাজনক হয়ে যাবে। তাই জেনেশুনে ঐরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়াটা সমীচীন নয়। তার চেয়ে বরং ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ থেকে ফেরার পর নিশ্চিন্ত হয়ে ছুটি গিয়ে জবাকে নিয়ে আসবো আর সেকথাটা আমি বাবা মাকে এবং জবাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিলাম। যাইহোক, ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার মানসিকতা নিয়ে পরদিন থেকে শুরু হয়ে গেলো আমাদের প্রস্তুতি পর্বের প্রারম্ভিক পদক্ষেপ। প্রতিদিন দিনান্তে ব্যাটালিয়ন কমান্ডারকে রিপোর্ট দেওয়া হতো সেই দিনটিতে প্রস্তুতির কতটা প্রগতি হলো আর তার সঙ্গে ঠিক তারপরদিন কি কি করা হবে সেটাও ব্যাটালিয়ন কমান্ডারের সাথে বিশদ আলোচনা করে ঠিক করা হতো। এইভাবে প্রস্তুতি পর্বের বেশ কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন উচ্চতর ফরমেশন হেডকোয়ার্টার এর প্রধান জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চীফ সংক্ষেপে GOC-in-C আমাদের ব্যাটালিয়ন লোকেশনে পরিদর্শনে এলেন। GOC-in-C-র পরিদর্শনের সময় আমাদের ব্যাটালিয়ন লোকেশন ছাড়া আশে পাশের অন্যান্য বেশ আরো কয়েকটি ব্যাটালিয়নের ও পরিদর্শন করবেন, এমন টাই তাঁর প্রোগ্রাম। আমাদের ব্যাটালিয়নে এসে উনি ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জের কম্পিটিশনের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখে উনি ভীষণ সন্তুষ্ট। তারপর উনি আদেশ দিয়ে বসলেন আমাদের ব্যাটালিয়ন সহ আশেপাশের প্রায় দশ বারোটা ব্যাটালিয়ন ৮০ কিলোমিটারের রুট মার্চ করবে। রুট মার্চ মানে উর্দিপরে, বন্দুক কাঁধে করে ইকুইপমেন্টের সাথে একেবারে পায়ে হেঁটে পথ অতিক্রম করা। এই রুট মার্চ টা নাকি আসন্ন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জের ফায়ারিং কম্পিটিশনে আমাদের সকলের শারীরিক অনুশীলনীর অংশ হিসাবে আমাদের মধ্যে পর্যাপ্ত সহনশীলতা নিয়ে আসার জন্য খুবই উপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ। ৮০ কিলোমিটারের দূরত্ব আর সেটা আমাদের অতিক্রম করতে হবে তিন দিনে। এই ৮০ কিলোমিটার আমরা কোন কোন দিক দিয়ে যাবো অর্থাৎ রুট সেটা মার্ক করে দেওয়া হবে সেই এলাকার একটি বিশিষ্ট মানচিত্রে আর মানচিত্রের সেই মার্কিং অনুযায়ী আমাদের রুট মার্চ করতে হবে এমনটাই নিয়ম রুট মার্চের। আমাদের রুটে গ্রাম, ছোট শহর, কোথাও কাঁচা আবার কোথাও পাকা সড়ক, ঝোপঝাড়, জঙ্গল, বন্ধুর এলাকা, ইত্যাদি পড়বে। আমাদের এই তিনদিন সকালের ব্রেকফাস্ট, চা থেকে আরম্ভ করে রাত্রির ডিনার এমনকি স্নান পর্যন্ত সবকিছুই রাস্তায় করতে হবে আমাদের আর তার জন্য নির্দিষ্ট বিরতি থাকবে। রাত্রি আটটার সময় নৈশভোজন সেরে নেওয়ার পর সেই দিনের মতো রুট মার্চ সমাপ্ত হবে এবং সবাই কে একটি উপযুক্ত স্থানে বিশেষ করে যেটি খোলামেলাও হবে আবার রাত্রিবাস করার জন্য সুরক্ষিতও হবে, সেইরকম একটি স্থানে তাম্বু খাটিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ রাত্রির জন্য বিশ্রাম দেওয়া হবে। রুট মার্চ চলাকালীন আমাদের সঙ্গে থাকবে সমস্ত রকমের আনুষঙ্গিক এবং ইমার্জেন্সি সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সবরকম ব্যবস্থা, খাদ্য সামগ্রীর গাড়ি, স্নান ও পানীয় জলের গাড়ি, ওষুধপত্র ও মেডিকেল উপকরণ সম্মৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স, ইত্যাদি। তাহলে ব্যাপারটার গুরুত্ব আপনারা পাঠকরা বুঝতেই পারছেন। নির্ধারিত দিনের সূর্য্যের প্রথম কিরণের ছটা মাটিতে পড়ার আগেই আমরা আমাদের ইষ্টদেবতা কে স্মরণ করে বেরিয়ে পড়লাম রুট মার্চে। প্রচন্ড গরম, হাঁটার পথ কোথাও বালুকাময় আবার কোথাও কণ্টকাকীর্ণ, কোথাও কর্দমাপূর্ণ আবার কোথাও জলময়, কোথাও জনবহুল আবার কোথাও ফাঁকা ডাঙ্গা। পথে শত বাধা বিঘ্ন, তবু হেঁটে চলেছি আমরা সবাই। থামছিনা কেউ। তখন আমাদের শক্তির একটাই মূলমন্ত্র – কদম কদম বাড়ায়ে যা…খুশি কে গীত গাইয়ে যা…ইয়ে জিন্দেগী হে কাম কি…তু কাম পে লুটায়ে যা…। সকালের প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ছি, মাঝখানে মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতি আর রাত্রিতে ভালো সুরক্ষিত জায়গা দেখে সেখানে শিবির ফেলা আর স্নানোত্তর নৈশ ভোজন আর তারপর পর সেদিনকার মতো বিশ্রাম, আবার তার পরদিন।
GOC-in-C আমাদের পুরো তিনদিনের টাইম টার্গেট দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা আড়াই দিনের মাথাতেই ফিরে এসেছি আমাদের ব্যাটালিয়নের লোকেশনে। আমাদের অনুশাসন, নিয়মানুবর্তিতা এবং সময়ানুবর্তিতা সব দেখে GOC-in-C যারপরনাই খুশি। তারপর উনি আমাদের ব্যাটালিয়নকে আসন্ন ফিল্ড ফায়ারিং কম্পিটিশনের সাফল্য কামনা করে আমাদের কাছ থেকে নিজের হেডকোয়ার্টারে ফিরে গেলেন। যদিও একনাগাড়ে অতটা হাঁটার ফলে ক্লান্তিতে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, ভারী জুতার দংশনে কারোর পায়ে বড় বড় ফোস্কাও পড়ে গিয়েছিলো কিন্তু সেগুলোকে থোড়াই কেয়ার করে খুব তাড়াতাড়িই আবার আমরা নিজের জীবনছন্দে ফিরে গিয়েছিলাম। আর তার সঙ্গে ফিরে গিয়েছিলাম ফিল্ড ফায়ারিং কম্পিটিশনের প্রস্তুতির কর্মছন্দে। মহাভারতের অর্জুনের মৎস চক্ষুর মতো লক্ষ্য তখন একটাই – মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জের কম্পিটিশন। লক্ষ্যভেদ করে সেই কম্পিটিশনে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করে সুনাম অর্জন করাটাই আমাদের মিশন। আমাদের ব্যাটালিয়নের সুনামের ডঙ্কা বাজিয়ে সেনা সমাজে আমাদের ব্যাটালিয়নের নাম গৌরব মন্ডিত করাটাই আমাদের মিশন। আর তবেই হবে আমাদের পরিশ্রম সফল। আমাদের প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে চলছে। দেখতে দেখতে কাছে এসেই গেলো মহাজন ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে রওনা দেওয়ার শুভদিনটি।
ক্রমশঃ
ATGM অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল