মসির ধারায় অসির ধার (১৪)

সঞ্জীব মুখার্জী
“I wonder whether those of our political masters who have been put in charge of the defence of the country can distinguish a mortar from a motor; a gun from a howitzer; a guerrilla from a gorilla, although a great many resemble the latter.”
~ Field Marshal Sam Manekshaw
২২শে জুন ১৯৮৭, ঔরঙ্গাবাদ থেকে ঝিলাম এক্সপ্রেস নামে একটি দুর্দান্ত সুপারফাস্ট ট্রেনে করে যখন আমি আর আমার সঙ্গের ৩টি ছেলে নিউ-দিল্লি স্টেশনে পৌঁছলাম তখন রাত্রি প্রায় আটটা বাজে। স্টেশনে আগে থেকেই আমাদের রেজিমেন্টাল সেন্টারের গাড়ি আমাদের নিতে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলো, তাই স্টেশন থেকে সেন্টারে পৌঁছতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। রেজিমেন্টাল সেন্টারে পৌঁছে আমরা ডিনার করে নিয়ে যে যার ঘুমোতে চলে গেলাম। রেজিমেন্টাল সেন্টারের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজার অনুযায়ী যারা রেজিমেন্টাল সেন্টারের বহির্ভূত অন্য কোনো স্পেশাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং কমপ্লিট করে ফিরে আসে তাদের সঙ্গে সঙ্গে রেজিমেন্টাল সেন্টারের কমান্ড্যান্ট সাহেবের সাথে একটি সাক্ষাৎকার করানো হয়, এটাই নিয়ম। তাই সেই নিয়মানুযায়ী আমাদের চারজনের সাথে ঠিক আমাদের পৌঁছনোর পরদিনই কমান্ড্যান্ট সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সেই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কমান্ড্যান্ট সাহেব আমাদের সকলের সাথে এক এক করে খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা বললেন। কথা বলার শেষে তিনি আমাদের শুভকামনা দিলেন আর বললেন যে আমাদের কয়েকদিনের মধ্যেই শপথ গ্রহণ করানো হবে আর তারপর দেশের কোনো না কোনো একটি বিশেষ জায়গাতে আমাদের পোস্টিং করে দেওয়া হবে আর আমরা যেন সেখানে আমাদের কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হয়ে কাজ করি, কোনো কিছুকে যেন ভয় না পাই। দেশ রক্ষার জন্য আমাদের উপর যত বড়ই ঝঞ্জাট-ই আসুক না কেন তা যেন আমরা সাহসের সঙ্গে তার মুখোমুখি হি এবং শত্রুর বিনাশ করতে যেন এতটুকু পিছপা না হই। আমাদের সর্বদা একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা দেশের বিভিন্ন সীমান্তে সজাগভাবে প্রহরারত থাকি বলেই আমাদের সমগ্র দেশবাসী রাত্রিতে সুরক্ষিতভাবে ঘুমোতে পারে। কমান্ড্যান্ট সাহেবের কাছ থেকে এই সব অনুপ্রেরণামূলক উপদেশ পেয়ে আমাদের মধ্যে সত্যিই সাহস এবং উদ্যমের এক বিশেষ অনুভূতির সঞ্চার হয়েছিল। সেইদিন থেকেই দেশের সুরক্ষার প্রতি কর্তব্য পরায়ণতা, সে যেকোনো কষ্টের বিনিময়েই হোক, যেন আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র হয়ে গিয়েছিলো।
আরো কয়েকটি দিন কেটে গেলো রেজিমেন্টাল সেন্টারের গতানুগতিক জীবনযাত্রার মধ্যে দিয়ে। বাবার চিঠিতে জানতে পেরেছিলাম যে কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়িতে নিকটবর্তী থানা থেকে দুজন পুলিশের লোক এসেছিলো এবং আমার ভেরিফিকেশন করে গেছে। দিন কয়েকের মধ্যে সেই ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আমাদের রেজিমেন্টাল সেন্টারেও পৌঁছে গিয়েছিলো। সেই সঙ্গে এডুকেশনাল সার্টিফিকেটের ভেরিফিকেশন রিপোর্টও এসে পৌঁছেছিল আমাদের রেজিমেন্টাল সেন্টারের হেড কোয়ার্টারে। ভারত সরকারের নিয়মানুযারী শপথ গ্রহণের জন্য এইসমস্ত ভেরিফিকেশন রিপোর্ট একান্তই আবশ্যিক এবং সঠিক ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ছাড়া শপথ গ্রহণ হবে না। একদিন সন্ধ্যাবেলায় রিক্রিয়েশন রুমে বসে টিভি তে কিছু একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম, তখন একজন লোক এসে জানালেন যে পরদিন সকাল ঠিক আটটায় রেজিমেন্টাল সেন্টারের প্যারেড গ্রাউন্ডে আমাদের শপথ গ্রহণ করানো হবে। যথারীতি আমরা পরদিন সকাল বেলায় স্নান টান সেরে নতুন ইউনিফর্ম পরে পূর্বনির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে গেলাম। সেন্টার কমান্ড্যান্ট সাহেবের অধ্যক্ষতায় এবং আরো ছোটবড় আধিকারীদের উপস্থিতিতে রেজিমেন্টাল সেন্টারের মন্দিরের পুরোহিত মশাই আমাদের শপথ গ্রহণ করালেন। শ্রীমদ্ভাগবৎ গীতায় হাত রেখে শপথ গ্রহণের সময় যখন আমরা কয়েকটি বিশেষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা মূলক মন্ত্র উচ্চারণ করছিলাম, তখন আমাদের দেহে-মনে-হৃদয়ে-আত্মায় এমন এক আভ্যন্তরীন প্রতিক্রিয়া আর অনুভূতির সঞ্চার হয়েছিল যে তা আমি আপনাদের ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
শপথ গ্রহণ করার পর আমি একজন স্থায়ী এবং পরিপূর্ণ সৈনিকের পদমর্যাদা পেলাম আর সেই সঙ্গে পেলাম রেজিমেন্টাল সেন্টারের বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করার দায়িত্ব এবং সুযোগ। তবে রেজিমেন্টাল সেন্টারের দৈনন্দিন জীবনের উল্লেখযোগ্য কাজ যেমন শারীরিক অনুশীলনী, ‘হ্যান্ডলিং অফ উইপন’, ফুটবল ভলিবল খেলা, ব্যক্তিত্ব বিকাশের কার্যকলাপ ইত্যাদি যথারীতি চলছিল। আর তার সাথে কেটে যাচ্ছিলো পোস্টিং অর্ডার হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষার দিনগুলি। মাঝে মাঝে ছুটির দিনগুলোতে বা যখনই সময় সুযোগ পেতাম এক এক করে দিল্লির বিশেষ বিশেষ স্থানগুলি দর্শন করে ফেললাম। ইন্ডিয়া গেট, পার্লামেন্ট হাউস, সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতি ভবন, মুঘল গার্ডেন, কুতুব মিনার, জামা মসজিদ, লাল কিলা, লোটাস টেমপেল, নেহেরু মিউজিয়াম, ইন্দিরা গান্ধী মিউজিয়াম, জন্তর মন্তর, আপ্পু ঘর, চিড়িয়া ঘর ইত্যাদি ছিল দিল্লির সেই স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। এমনকি এই জায়গাগুলির মধ্যে কোনো কোনো জায়গা তো একাধিকবারও দেখা হয়ে গিয়েছিলো। এছাড়া উইক-এন্ডে কখনো সখনো সুযোগ পেলে দিল্লির বাইরেরও কিছু কিছু ঐতিহাসিক স্থান যেমন আগ্রার তাজমহল, মথুরা, বৃন্দাবন, হরিদ্বার, ঋষিকেশ, মুসৌরি, জয়পুর ইত্যাদি দেখে মনের তৃষ্ণা মেটালাম। চাক্ষুষ দেখার পূর্বে এই জায়গাগুলির সম্পর্কে শুধু বইতে পড়েছিলাম আর ছবিতে দেখেছিলাম; তাই চোখের সামনে দেখে, বলাই বাহুল্য, এক অদ্ভুত অনুভূতির সঞ্চার হয়েছিল আমার মধ্যে।
১২ জুলাই ১৯৮৭, প্রতিদিনের মত সেদিনও রেজিমেন্টাল সেন্টারের বিশেষ একটি কাজে আমি কর্মরত ছিলাম। হঠাৎ আমাকে হেডকোয়ার্টারে ডেকে পাঠানো হল আর সেখানে পোস্টিং অনুভাগের অফিসে আমি গেলাম। সেই অনুভাগের প্রধান একজন মেজর সাহেব আর তাঁর সাথে আমার ‘মুলাকাত’ করানো হল। মেজর সাহেবের কেবিনে প্রবেশ করার পর মেজর সাহেব আমায় ইশারায় একটি চেয়ার দেখিয়ে তাতে বসতে বললেন। আসন গ্রহণ করার পর মেজর সাহেব একথা সেকথা জিজ্ঞেস করতে করতে শুরু করলেন আমাদের মধ্যে কথোপকথনের ছোট্ট একটি অধ্যায়। বাক্যালাপ করতে করতে মেজর সাহেব একটু সাসপেন্স-এর সঙ্গে হঠাৎ আমায় বলেন যে আপনার পোস্টিং অর্ডার ইস্যু হয়ে গেছে, “ইওর পোস্টিং অর্ডার হ্যাজ বীন ইস্যুড বাই দিস অফিস”। আমি তো বিগত কয়েকদিন ধরে অপেক্ষাই করছিলাম পোস্টিং অর্ডারের জন্য, তাই ভীষণ উদগ্রীব হয়ে মেজর সাহেবকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনার্থে “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, আই ওয়াজ ইগারলি ওয়েটিং ফর মাই পোস্টিং অর্ডার” ব’লেই মেজর সাহেবকে তৎক্ষণাৎ একটি প্রশ্নও করে বসলাম, “স্যার, হোয়ার আই এম বিয়িং পোস্টেড্?” মেজর সাহেবের একটি ছোট্ট জবাব, “ইউ আর গোয়িং টু জয়েন ইওর ওন ব্যাটেলিয়ন হুইচ ইজ পোস্টেড্ ইন পাঞ্জাব।” আমি মেজর সাহেবকে আবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিনীত ভাবে জিজ্ঞেস করলাম, “স্যার, হোয়েন আই হ্যাভ টু মুভ?” আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা না দিয়েই মেজর সাহেব আমায় জিজ্ঞেস করলেন চা খাবেন না কফি, আর সেটা জিজ্ঞেস করতে করতেই ততক্ষনে মেজর সাহেব তাঁর টেবিল-বেল বাজিয়ে আর্দালিকে ডেকে পাঠালেন। আমি বললাম চা-ই চলবে স্যার। মেজর সাহেব দুকাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে এবার আমার কথায় ফিরে এলেন, মুচকি হেঁসে বললেন অত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন, আপনার পোস্টিং অর্ডারে সব কিছু বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে। তারপর উনি তাঁর অফিসের একজনকে ডেকে পাঠিয়ে আমার পোস্টিং অর্ডারটা আনতে বললেন। পোস্টিং অর্ডারটা এসে যাওয়ার পর সেটি আমার হাতে দিয়ে আমাকে বললেন, মন দিয়ে পড়ুন, এতে সব লেখা আছে। ততক্ষণে চা-ও এসে গেছিলো। ধূমায়মান চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পোস্টিং অর্ডারটার উপর চোখ বোলাতে লাগলাম।
পোস্টিং অর্ডার আমাকে সেই দিনই ইস্যু করে দেওয়া হবে আর তারপর আমার হাতে থাকছে ১৫ টা দিন অর্থাৎ পোস্টিং অর্ডার পাওয়ার ঠিক ১৫ দিনের মাথায় আমাকে দিল্লির রেজিমেন্টাল সেন্টার ছেড়ে পাঞ্জাব অভিমুখে রওনা দিতে হবে। আমার এই ১৫টি দিন ঠাসা থাকবে একটি স্পেশাল ট্রেনিং ক্যাপসুল দিয়ে। এই ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে কিছু বিশেষ ধরণের যুদ্ধ কৌশল এবং রণনীতির ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যেগুলি পাঞ্জাবে ভীষণভাবে উপযোগী। তবে এই ১৫ দিনের স্পেশাল ট্রেনিং-এ একটা কথা আমাকে মূলমন্ত্রের মতো শেখানো হয়েছিল যেটি হলো “এক গোলি, এক দুশমন” অর্থাৎ প্রশিক্ষণের নিপুণতার স্তর এতটাই নিখুঁত হওয়া উচিত যে শত্রুপক্ষের একজনকে মারতে কেবল মাত্র বন্দুকের একটি গুলিই খরচ হয় আর যদি একাধিক গুলি খরচ হয় তাহলে দুটো জিনিস ধরে নিতে হবে, যার প্রথমটা হলো নিশানার খামতি আর দ্বিতীয়টা হলো সরকারের অপচয়।
পাঞ্জাবের যে জায়গাতে আমার পোস্টিং হয়েছে সেই জায়গাটি হলো ফিরোজপুর জেলার ফাজিলকা নামক একটি শহরে। ফাজিলকা হলো এক্কেবারে পাকিস্তানের বর্ডার সংলগ্ন এলাকা এবং একইসঙ্গে পাঞ্জাবের অন্যতম সংবেদনশীল এলাকাগুলির মধ্যে একটি। ছোটবেলা থেকে আমি কোনো কিছুকে কোনোদিন ভয় পাইনি তাই পাঞ্জাবের পোস্টিং হওয়াতে আমি মানসিক এবং শারীরিক ভাবে এতটুকু বিচলিত তো হই-ই নি বরং, নুতন জায়গায় যাবো, নুতন কাজের দায়ীত্ব পাবো, নুতন উদ্যমে কাজ শিখবো এবং মিলিটারির আসল কাজ করার সুযোগ পাবো -এইসব ভেবে মনে মনে খুব রোমাঞ্চিতই হচ্ছিলাম। আর এগুলোর চাইতে বড় কথা ছিল আমার আর্মিতে যোগ দেওয়ার যে প্রধান উদ্দেশ্য, দেশরক্ষার্থে নিজেকে সমর্পিত করে দেওয়া, সেটি পূর্ণাঙ্গরূপে সফল হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী গানের দুটো পংক্তি “বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়” আমার মনে বিপুল পরিমানে শক্তি আর সাহস এনে দিতো।
সমগ্র পাঞ্জাব প্রদেশটি তখন একটি খালিস্তানি উগ্রবাদীতে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিলো আর ভীষণ সংকটের মধ্যে যাচ্ছিলো। ঠিক তার দুই তিন বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরে একটি সামরিক অভিযান চালানো হয় যার নাম ছিল “অপারেশন ব্লু স্টার।” সেই অভিযানে আমাদের সামরিক বাহিনীর দ্বারা বিপুল সংখ্যক খালিস্তানি উগ্রবাদীকে বিনাশ করা হয়, বেশ কিছু উগ্রবাদীকে বন্দি বানানো হয় আর সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় স্বর্ণমন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে প্রচুর পরিমানে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ইত্যাদি। কিন্তু সেই সামরিক অভিযানে আমাদের দেশকেও কম মাশুল দিতে হয়নি। শহীদ হতে হয় আমাদের দেশের সেনা বাহিনীর এবং আধা সামরিক বাহিনীর বেশ কিছু শূর-বীরদের। সেই সামরিক অভিযানের কুফল স্বরূপ পাঞ্জাবের চারিদিকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে খালিস্তানি উগ্রবাদীরা। রাজ্যের বড় বড় শহর, গ্রামগঞ্জ, কৃষিপ্রধান এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে স্টেশন, এমনকি ভ্রাম্যমান ট্রেন, বাস ইত্যাদি কোনো কিছুই বাকি ছিলোনা যার উপর উগ্রবাদীদের প্রকোপ পড়েনি বা যার উপর উগ্রবাদীরা আঘাত হানেনি। অনেক নিরীহ নাগরিককে প্রাণ হারাতে হয় উগ্রবাদীদের হাতে, বিনষ্ট হয়ে যায় বহু সরকারি বেসরকারি সম্পত্তি, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায় উগ্রবাদীদের অত্যাচারে।
দেখতে দেখতে সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়ে গেলো আমার ১৫ দিনের স্পেশাল ট্রেনিং ক্যাপসুল। অনেক কিছু শিখলাম, জানলাম আর বুঝলাম এই স্পেশাল ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এই কয়েক মাসের মিলিটারির জীবনযাত্রার সুবাদে ধীরে ধীরে আমার ব্যক্তিত্বের মধ্যেও এসে গিয়েছিলো বিশেষ পরিবর্তন। ততদিনে আমি নিজেই অনুভব করতাম “আগের আমি” আর “তখনকার আমি”-র মাঝে সেই বিশেষ পরিবর্তনের। ২৭শে জুলাই ১৯৮৭, আমি হাতে ‘মুভমেন্ট অর্ডার’ পেয়ে ৭ দিনের ‘প্রিপারেটরি লিভ’-এর সাথে দিল্লি ছেড়ে বাড়ির অভিমুখে রওনা দিলাম। বাড়িতে পাঁচ ছয় দিন থেকে সবার সাথে গল্প গুজব করে খুব আনন্দ উপভোগ করে আসানসোল স্টেশন থেকে পাঞ্জাব মেল্ ধরলাম। পাঞ্জাব মেলের মূল গন্তব্যস্থল হলো অমৃতসর। কিন্তু আমাকে অমৃতসর-এর ঠিক আগের একটি স্টেশন লুধিয়ানায় নেমে যেতে হলো। লুধিয়ানায় নেমে সেখান থেকে ‘ট্রেন’ বদল করে ফাজিলকা পৌঁছলাম। স্টেশন থেকে ব্যাটালিয়নের গাড়িতে করে যখন ইউনিট লোকেশনে পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা বেলা। পরদিন ৩রা আগস্ট ১৯৮৭ সকাল আটটায় ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারে কম্যান্ডিং অফিসারকে আমার রিপোর্টিং। আর তারপরই শুরু আমার আর্মি জীবনের মূল স্রোতের একটি বিশেষ অধ্যায়।
ক্রমশঃ