মসির ধারায় অসির ধার (১১)

সঞ্জীব মুখার্জী
“As much quantity you spend your sweat during your training, you will save the equal quantity of blood in the battlefield.”
~ Field Marshal Sam Manekshaw
রাজপুতানা রাইফেলস রেজিমেন্টাল সেন্টারে জয়েন করার পর আমার বেসিক ট্রেনিং শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন আরো কেটে গেলো। তখন আমাদের ব্যাচ গঠন-এর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন কিছু কিছু করে ছেলে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আর তাদের নিয়েই ব্যাচ তৈরি হচ্ছে। আমিও সেই ব্যাচের-ই একজন। আমাদের ব্যাচ গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রশিক্ষকদেরও একটি দল তৈরী হয়ে গেছে। সত্যি কি সাংগঠনিক লোক এরা। সব যেন মেশিনের মতো আপনা থেকে একের পর এক ঘটে চলেছে। সমান্তরালে একদিন ইংরাজীর নতুন বছরও অর্থাৎ ১ জানুয়ারী ১৯৮৬ এসে গেলো। শুনলাম আর্মিতে নতুন বছর খুব ধুমধাম করেই পালন করা হয়। নাচ গানের সঙ্গে সেই ধুমধামের একটি বিশেষ অঙ্গ হলো পার্টি। আর্মির পার্টি যে কিভাবে হয় সেই দিন দেখতে পেলাম। একটি বেশ বড় মাঠে চারিদিকে তাঁবু খাটিয়ে তাদের প্রতিটিতে ছোট ছোট দলে দলবদ্ধ হয়ে নানান ধরণের খাওয়া দাওয়া এবং বিভিন্ন ধরণের বিলিতি মদ খাওয়া হলো আর্মির পার্টির বিশেষ দিক। রেজিমেন্টাল সেন্টারের প্রধান অর্থাৎ ‘কমান্ড্যান্ট সাহেব’ এসে পার্টি ফ্ল্যাগ অফ করেন অর্থাৎ তাঁর অনুমতি নিয়েই পার্টি শুরু হয়। আমাদের সেই পার্টিতে অংশ গ্রহণ করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পার্টিতে আমরা খাবার যত খুশি তো খেতে পারি তবে মদ্যপান করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। মাছ মাংস ডাল তরকারি ভাত রুটি দই মিষ্টি কোনোটারই অভাব ছিল না, যে যত খুশি খেতে পারে। রেজিমেন্টাল সেন্টারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী যতদিন ট্রেনিং শেষ না হচ্ছে আর তারপর শপথ গ্রহণ না হচ্ছে ততদিন প্রশিক্ষণ চলাকালীন কোনো ছেলের কোনো নেশার জিনিস অর্থাৎ মদ, তামাক জাতীয় পদার্থ এমনকি বিড়ি সিগারেট কোনো কিছু সেবন করার অনুমতি ছিল না। এটা আমাদের পরিষ্কার ভাবে বলে দেওয়া হয়েছিল যে যদি ট্রেনিং চলাকালীন ব্যাচের কোনো ছেলে এই নিয়মভঙ্গ করে তাহলে তার কঠিন শাস্তি হবে যেটাকে ইংরেজিতে Corporal Punishment বলা হয়। যাইহোক, ভালোভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে এবং খুব আনন্দের মধ্যেই ১লা জানুয়ারী পালিত হলো। পরের দিনগুলো আরো তাড়াতাড়িতে কেটে যাচ্ছিলো। আমাদের ট্রেনিং এর ব্যাচ গঠনের কাজ শেষ। ৪০ জনের ব্যাচ। ব্যাচের কেউ দক্ষিণ ভারতের, কেউ বাঙালি যেমন আমি, কেউ উত্তর প্রদেশের, কেউ মধ্যেপ্রদেশের, কেউ গুজরাটের আবার কেউ উড়িষ্যার। মনে পরে গেলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই সাড়া জাগানো বাণী “নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান”। তাদের সঙ্গে একসাথে থাকতে থাকতে আমরা সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে আমরা সবাই আর্মির নিয়মে আসতে শুরু করেছিলাম। এরই মধ্যে আমাদের সকলকে রেজিমেন্টাল সেন্টারের ভিতরেই অবস্থিত একটি স্যালুনে নিয়ে যাওয়া হলো আর আমাদের সকলের সুন্দর সুন্দর স্টাইল করা এবং যত্নআত্তি করে বড় করে তোলা চুলগুলোকে মেশিন চালিয়ে বাটিছাঁট বা কদমছাঁট চুলে পরিণত করে দেওয়া হলো। রেজিমেন্টাল সেন্টারে পৌঁছনোর দুই তিন দিনের মধ্যেই সকলকে মিলিটারির সমস্ত রকম সাজ সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছিলো যেটাকে আর্মির ভাষাতে কিট বলা হয়ে থাকে। সেই কিটে অনেক রকম সামগ্রী থাকে তাদের অন্যতম জিনিস হলো ইউনিফর্ম, কোট, বুট, PT Shoe, ব্লাঙ্কেট, বড় মগ, থালা, বাটি, গ্লাস, চামচ, তোয়ালে ইত্যাদি।
আরো কয়েকদিন যেতে না যেতেই শুরু হয়ে গেলো আমাদের বেসিক ট্রেনিং-এর পর্ব। খুব ভোরবেলা উঠে পড়তে হতো আর ওঠার পর এক কাপ করে চা, না না এক কাপ করে নয়, এক মগ করে চা। বিছানার পাশে দিয়ে যেত আমাদেরই ব্যাচের একটি ছেলে, কেননা পাশের একটি বিশাল বড় কিচেন থেকে একটি মস্তবড় কেটলিতে করে চা নিয়ে ব্যাচের সবাইকে চা বিতরণ করার দায়িত্ব আমাদের ব্যাচের সেই ছেলেটির থাকতো। অবশ্য, এই দায়িত্বভার ব্যাচের ছেলেদের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তিত হতো রোটেশন-এর ভিত্তিতে। চা খেয়ে বাথরুম পর্বটা সেরে নিয়ে তৈরি হয়ে PT ড্রেস পরে একটি নির্দ্দিষ্ট মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ এর জন্য যাওয়া। ৪০ মিনিট এর পর্ব। নানান ধরণের ব্যায়াম, দৌড়ানো, ডন বৈঠক, আর একজনকে পিঠে উঠিয়ে দৌড়ানো, ইত্যাদির মাধ্যমে শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। শারীরিক প্রশিক্ষণ-এর পর এক ঘন্টা ব্রেক অর্থাৎ বিরতি। আর সেই বিরতিতে ব্রেকফাস্ট সেরে প্যারেড এবং ড্রিল-এর জন্য ইউনিফর্ম আর জুতো পরে বিরতি শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে-ই ড্রিল গ্রাউন্ডে পৌঁছাতে হতো। সেখানে আমাদের যুদ্ধ সম্বন্ধিত নানান শিক্ষা দেওয়া হতো। ট্রেনিং দেওয়া হতো আমাদের সাপ্তাহিক ট্রেনিং প্রোগ্রামের ভিত্তিতেই। ট্রেনিং প্রোগ্রামের এতটুকু নড়চড় হবার জো নেই। সাবধান বিশ্রাম, লেফট রাইট লেফট রাইট ড্রিল এবং কদমতাল ছাড়া ড্রিল গ্রাউন্ডে নানান ধরণের অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের ব্যবহার, যুদ্ধক্ষেত্রে কিরকম পরিস্থিতি হয় তার সম্পর্কে অবগত করানো, ইত্যাদি ছিল বেসিক ট্রেনিং-এর প্রধান অংশ। ট্রেনিং এর বিশেষ অঙ্গ হিসাবে মাঝেমধ্যে আমাদের দিয়ে ফায়ারিং রেঞ্জে ফায়ারিং করানো হতো। আবার কোনো কোনোদিন ৫ – ১০ কিলোমিটার পায়ে হাঁটিয়ে আনা হতো যেটাকে বলা হয় রুট মার্চ। ট্রেনিং চলাকালীন একটা কথা আমাদের মূলমন্ত্র হিসাবে বলা হতো যে ট্রেনিংএ যে যত কষ্ট করবে সে তত শিখবে আর যে যত শরীরের ঘাম ঝড়াবে যুদ্ধক্ষেত্রে সে তত নিজের রক্ত বাঁচাবে। ট্রেনিং-এ যে ফাঁকি দেবে যুদ্ধক্ষেত্রে তার জীবন বিপন্ন হবে। প্রথম প্রথম ট্রেনিংয়ের পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে খুব কঠিন বলে মনে হতো। মাঝে মাঝে ভাবতাম যে ট্রেনিংটা কমপ্লিট করতে পারবো তো? কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে সবকিছু রপ্ত হয়ে গিয়েছিলো। ড্রিল গ্রাউন্ডে যাঁরা আমাদের ট্রেনিং দিতেন তাদের বলা হতো ‘GT’ অর্থাৎ গ্রাউন্ড ট্রেনিং ইন্সট্রাক্টর। দুপুর হওয়ার আগেই গ্রাউন্ডের ট্রেনিং শেষ হতো আর তারপর লাঞ্চ। লাঞ্চ সেরে দুই ঘন্টার সম্পূর্ণ বিশ্রাম। বিশ্রামের পর আমাদের গেম খেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হতো। আর্মিতে গেম খেলাটা ছিল বিভিন্ন প্রান্ত, বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা সমস্ত ছেলেদের মধ্যে ব্যক্তিত্তের বিকাশ আনার একটি মাধ্যম। একটি নির্দ্দিষ্ট গেম কমপ্লেক্সে নানান ধরণের গেম খেলার ব্যবস্থা ছিল, যেমন বাস্কেটবল, ভলিবল, ফুটবল, জিমন্যাস্টিক ইত্যাদি। সেখানে আমরা ব্যাচের সবাই নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী খেলাধুলা করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আমাদের ব্যারাকে ফিরে আসতাম। সেখান থেকে এসে হাত পা ধুয়ে সন্ধ্যা বেলায় ডিনার সেরে নিতে হতো। তারপর যে যার নিজের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিতো। বিছানায় পড়া মাত্র চোখে ঘুম এসে যেত। তারই মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করতো। ইতিমধ্যে আমারও বেশ কয়েকটি ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। দক্ষিণ ভারতীয় ছেলে ছাড়া দু-এক জন উড়িয়া ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব বেশি ছিল। তাদের সাথে থাকতে থাকতে আর কথা বলতে বলতে উড়িয়া ভাষাটাও শিখতে শুরু করেছিলাম। একদিন অনুভব করলাম আমি উড়িয়া ভাষাটা বেশ দক্ষতার সাথে বলতে পারছি। তা দেখে আমাকে সেই উড়ে বন্ধুগুলো বলেই ফেললো, “অরে তমেকো দেখিকে আউ তমে মুহরে উড়িয়া ভাষা সুনিকে জমা মনে হউনি যে তমে বঙালী পিলাটা ওছি, বিলকুল উড়িয়া লাগুচি।” অর্থাৎ “তোমাকে দেখে আর তোমার মুখে উড়িয়া ভাষা শুনে একদম মনে হচ্ছেনা যে তুমি একজন বাঙালি ছেলে, বরং উড়িয়া বলেই বেশি মনে হচ্ছে।” তা শুনে আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যেত। অবশ্য উড়িয়া ভাষাটা আজও ভুলিনি আমি, এখনো উড়িয়া ভাষাতে বাংলা ভাষার মতো স্পীডে কথা বলতে পারি।
একদিন হঠাৎ শুনতে পেলাম যে আমাদের রেজিমেন্টাল সেন্টারে একটা ফিল্মের শুটিং হবে। শুটিং দেখবো বলে স্পটে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি শুটিংয়ের যে মধ্যমনি সে আর কেউ নয়, সে হলো আজকের বলিউড সিনেমা জগতের কিংবদন্তি পুরুষ এবং স্বনামধন্য অভিনেতা শাহরুখ খান। আমাদের কেউ কেউ গিয়ে শাহরুখ খানের সাথে কথাও বলে আসলাম। বেশ কয়েক দিন ধরেই শুটিংটা চললো। সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে রেজিমেন্টাল সেন্টারের অনেক জায়গায় সকলের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল তাই সেই সমস্ত জায়গাগুলো ছেড়ে দিয়ে শুটিংটা হতো রেজিমেন্টাল সেন্টারের ভিতরে নানান অংশে। পরে জানলাম যে শুটিংটা কোনো ফিল্ম অথবা মুভির শুটিং ছিলোনা, শুটিংটা ছিল একটি শাহরুখ খান অভিনীত প্রথম টিভি সিরিয়ালের যার নামটি হয়তো আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন, সিরিয়ালটির নাম ছিল “ফৌজি”। সিরিয়ালটি অনেক পরে দিল্লি দূরদর্শন সংকলিত একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে টেলিকাস্ট করা হয়েছিল এবং বলাই বাহুল্য সিরিয়ালটি বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিল। শাহরুখ খান ছাড়া আর একজন বিখ্যাত লোকের সাথে শুটিং স্পটে আলাপ হয়েছিল আর তাঁর নাম কর্নেল কাপুর। হ্যাঁ, কর্নেল কাপুরই ছিলেন সেই টিভি সিরিয়ালটির প্রযোজক এবং নির্দেশক। আমাদের সকলের সাথে কথা বলেছিলো কর্নেল কাপুর আর শাহরুখ খান। খুব ভালো লেগেছিলো সেদিন তাঁদের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে। চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম সেকথা বাবা মা আর বন্ধুবান্ধবদের।
ট্রেনিং চলছে নিজের গতিপথে এবং নিজের গতিতেই। ততদিনে আমরা ট্রেনিংয়ের অনেকটাই রপ্ত করে ফেলেছিলাম, ট্রেনিং টাকে উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম আর তাই ট্রেনিংটা আর কষ্ট বলে মনে হতোনা। যাই হোক ট্রেনিং চলাকালীন একদিন হটাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। রেজিমেন্টাল সেন্টারের ভিতরেই একজন মিলিটারি ডাক্তারকে দেখানো হলো। ডাক্তার বললেন আমার ‘চিকেন পক্স’ হয়েছে। সেইসমস্ত দিনে দিল্লিতে চিকেন পক্স এপিডেমিকের মতো ছেয়ে গেছিলো। ডাক্তার দেখানোর পর যথারীতি আমাকে ডাক্তার রেফার করে দিলেন রেজিমেন্টাল সেন্টারের নিকটস্থ কিন্তু সেন্টারের বাইরে অবস্থিত একটি মিলিটারি হাসপাতালে। সেখানে আমাকে একটি মিলিটারি গাড়িতে করে ছেড়ে দিয়ে এলো।হাসপাতালে যাওয়ার পর আমাকে ভর্তি করে নেওয়া হলো। মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে খাওয়া আর ঘুমোনো ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে পর্যন্ত চিকেন পক্স আর সেই রোগের পালন সম্পর্কে আমার যেসমস্ত ধ্যানধারণা ছিল তা একেবারেই ভেঙে গেলো। পাড়ায় বা বাড়িতে কারোর চিকেন পক্স হলে কত খাওয়া দাওয়ার নিয়ম পালন আর বিধিনিষেধ কিন্তু মিলিটারি হাসপাতালে আমাকে প্রচুর পরিমানে মাছ মাংস ডিম্ ভাত তরকারি রুটি খেতে দেওয়া হতো আর সেটা দেওয়া হতো প্রতিদিন নিয়ম করে, ওটাকে আর্মিতে ডায়েট বলা হয়ে থাকে। ঐসব খেয়ে আমার তো পোয়া বারো তবে আমি ট্রেনিংয়ের অভ্যাস এবং প্রক্রিয়া থেকে কিছুদিনের জন্য বাইরে চলে গিয়েছিলাম। শুনে ছিলাম ট্রেনিং চলাকালীন অবস্থায় কোনো ছেলে যদি কোনো কারণ বশতঃ কুড়ি দিনের বেশি ট্রেনিংয়ের বাইরে থাকে তাহলে নিয়মানুযায়ী তাকে নেক্সট ব্যাচের সাথে ট্রেনিং করতে হবে অর্থাৎ গোদা বাংলায় যাকে বলে ফেল করে যাওয়া। অবশ্য ঈশ্বরের কৃপায় আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আমি চৌদ্দ পনেরো দিনের পরই রেজিমেন্টাল সেন্টারে ফিরে আসি তাই আমার সঙ্গে অপ্রিয় কিছু ঘটেনি। আমি ওই ব্যাচের সঙ্গেই ট্রেনিং চালিয়ে যাই। এইভাবে আরো কয়েক মাস পর আমার বেসিক ট্রেনিং কমপ্লিট হয়ে যায়। বেসিক ট্রেনিং কমপ্লিট হয়ে যাবার পর রেজিমেন্টাল সেন্টারের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাচের সবাইকে ২৮ দিনের মিডটার্ম ছুটি দেওয়া হয়। ২৮ দিনের ছুটি কাটিয়ে আসার অব্যবহিত পরেই আমাকে যেতে হবে প্রফেশনাল ট্রেনিংয়ের জন্য। প্রফেশনাল ট্রেনিং হবে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে। যেদিন আমরা ২৮ দিনের ছুটি পাই সেদিন আমাদের কি আনন্দ, সবাই খুশিতে উদ্বেল, এতদিন পর বাড়ি যাবো, সবার সাথে আবার দেখা হবে, কি মজাটাই না হবে, এইসব কথা ভেবে আনন্দের কুলকিনারাই যেন পাচ্ছিলামনা। আগে ছুটিটা তো আনন্দের সঙ্গে হইহুল্লোড় করে কাটাই তারপর ছুটি থেকে ফিরে এসে আবার আর একটি ট্রেনিংএ মন বসানো যাবে। একটি আর্মির বাসে করে আমাদের সকলকে নিউ দিল্লি স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসা হলো। সেখান থেকে ভিন্ন ভিন্ন ট্রেন ধরে যে যার গৃহের অভিমুখে রওনা দেবে, আমিও তাই…
ক্রমশঃ