August 21, 2025

লক্ষ্মী নাকি অলক্ষ্মী

বর্তমানে সব ধরনের বাঙালির কাছে সংসার চালানোর যেন “ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশ পাথর”। জিনিষের দাম প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। না, ন্, আগুন নয় ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট ছুয়েঁ যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আর দুনিয়ার পালা পার্বণ তো বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আর পুজোর দিনে বাজারে ঢুকলে মনে হয় যেন ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল চলছে। প্রচুর হট্টগোল আর যে জিনিষেই হাত পড়ে দাম শুনে মনে হয় পকেট ফাউল করছে। তাই বাধ্য খালি হাতে ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে। আমিষ নিরামিষ কেউ ছেড়ে কথা বলে না । অথচ বাড়িতে একটা দুটো পুজো না করলে পাড়ায় স্ট্যাটাস থাকে না।
এইতো এসেছিল কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। বাধ্য হয়ে এই গান ধরলাম ‘এসেছিলে তবু আসে নাই, জানায়ে গেলে …’ গিন্নি বললো ওসব নকশা ছাড়ো। এই পুজোটা না করলে শুকিয়ে মরতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেখি আমার বাহিনীরা সেজেগুজে আনাজ, ফল, কাটার জন্য রেডি। যাই হোক ধার দেনা করে প্রতিমা আর বাকি জিনিস জোগাড় করলাম। ছুটলাম পুরুত খুঁজতে। দু-চারজন হালকা-পাতলা যোগাড় দেখে সরে পরলো। শেষমেষ এক বৃদ্ধ, বধির পুরোহিত ধরে আনলাম। সব কথা প্রায় আকারে-ইঙ্গিতে বোঝাতে হয়। মনে যেন ভীষন রাগ হল। বললাম মাগো ধ্যানে বসলাম। বাঙালির জীবনে এখন লক্ষ্মী উধাও। কোথাও দুটো পয়সার মুখ দেখা যাচ্ছে না। বড় বড় নোবেল জয়ীরা প্রচার মাধ্যমে খালি ভবিষ্যতের কথা বলেন। এদিকে মা লক্ষ্মী সালঙ্করা হয়ে পয়সার ভাড়ার নিয়ে পটের বিবি হয়ে মন্ডপে মন্ডপে হাজির। ইনি কি মা লক্ষ্মী নাকি অলক্ষী? ছোটবেলায় ঠাকুমা দিদিমারা গোবরের পুতুল কুলোয় চাপিয়ে দিয়ে বলতো ‘ খাংরা দিয়ে মারতে মারতে পুকুর ধারে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দিবে। আর মুখে বলবি ‘”অলক্ষী দূর হ, ঘরের লক্ষী ঘরে আয়” আমাদের কি আনন্দ হতো।
এবার মনে হয় আমাদের সেই অলক্ষীকে আবার তাড়িয়ে জ্বালিয়ে দিতে হবে। দেশের কেষ্ট বিষ্টুরা দেশটাকে ধোঁকাবাজদের হাতে বিকিয়ে দিচ্ছে। আর মা লক্ষ্মী নির্বাক। কোজাগরীতে কেউ রাত জেগে মাকে ডাকে না। লক্ষ্মীর ভাঁড়ারে সারা রাত লাইন দেয়। সরকার ভিক্ষে দেবে তবে পেট চলবে। আমরা কি ভিক্ষে পাবার জন্যে জনমত দাখিল করে ছিলাম? জীবন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে প্রশ্ন জাগে “মা তুমি কি সত্যিই লক্ষী না অলক্ষ্মী? আমরা লক্ষ্মী ছাড়ার দল / জীবন পদ্মপ জল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *