কালুকের ডায়েরি – দ্বিতীয় পর্ব
অংশুমান সরকার :
কালুকের Transport Agent বিনোদ গুরুং এর ফোন নম্বর টা দিয়েছিলেন Mandarin এর Manager Mr. Limboo। আর আগে থেকে আমাদের জন্য দুটো Bolero গাড়ি (প্রদীপ এর পরামর্শ মতো – সুমো নয়) বুক করাই ছিল। এই বিনোদ গুরুং আর ম্যানেজার লিম্বু দুজনেই দেখলাম এক কথার মানুষ। আর গাড়ির ড্রাইভার দুজন – রাম আর লালবাহাদুর সদাহাস্যময়। আমরা NJP পৌঁছনর আগেই তারা ফোন করে জানালো যে তারা পৌঁছে গেছে, কিন্তু বেশি রাতে তাদের যেন ফোন করার কষ্ট না করা হয়, তারা পরদিন সকালে তৈরি থাকবে। যাত্রা শুরু হবার পর থেকেই প্রতিবারের
মতো উৎসাহ তুঙ্গে সকলের – বিশেষ করে আমাদের ছোট সদস্যদের। কিন্তু একটা বিষয় সতর্ক করা দরকার – শিলিগুড়ি শহরে যে কি বিচ্ছিরি রকমের যানজট হয় তা বলার নয়। আমাদের শিলিগুড়ি পার করতেই এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে গেল। তার পর শুরু হল সেই পাহাড়ি পাকদণ্ডি আর প্রত্যেক বাঁকে তিস্তার আলাদা আলাদা রূপ। এ জিনিস এতবার দেখেছি, প্রায় প্রত্যেক বছরই দেখছি, তবু যেন এর আকর্ষণ এতটুকু কমেনি। আমরা এবার রংপো হয়ে না গিয়ে মনলির (গুগল বলছে মেল্লি – শিলিগুড়ি থেকে ৪৬ কিমি) থেকে বাঁ দিকের রাস্তায় গেলাম। এই মনলি জায়গাটা আগে দেখিনি। এটি সিকিমের একটা গেট পয়েন্ট। এখানে আমাদের Identity Card check করা হল। এর আগে আরিতার – জুলুক যাবার পথে এটা পড়েনি। মনলিতে আমরা দুপুরের খাওয়া সারলাম। এখানে সব রকমের খাবারই পাওয়া যায় – ভাত, রুটি, চাউমিন, মোমো সবই, এবং খুব reasonable দামে। খাওয়ার পর তিস্তার পাড়ে নেমে ছবি তোলার লোভ সামালাতে পারলাম না। তাতেই একটু দেরি হয়ে গেল। বিপ্লব বলে – যে সিকিমের ক্ষেত্রে শুধু গন্তব্য নয়, যাত্রাপথ এর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাই আসল উপভোগ্য – বোধহয় ঠিক কথাই বলে। এরপর এগিয়ে চললাম আমরা। পরের halt একদম ঝোরথাং এ। একটা বিষয় এখানে না বললেই
নয় – মনলি থেকে ঝোরথাং এর রাস্তা কিন্তু খুব খারাপ, অন্তত এখনও। তবে দেখলাম যে রাস্তা তৈরির কাজ পুরোদমে চলছে। ঝোরথাং এ পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল, তখন মন টা চা এর জন্য ছটফট করছে। ঝোরথাং জায়গাটা তে বেশ একটা দার্জিলিং এর ম্যালের মতো feelings আছে। বেশ খানিকটা ফাঁকা এলাকা, তার চারপাশে দোকানপাট, বসার জায়গা, সুন্দর করে সাজিয়ে গাছ লাগানো। কেনাকাটার সুযোগ দেখে পারমিতা, মানে আমার গিন্নি, যথেষ্ট উৎসাহিত। তার সঙ্গে মৌ, রিম্পা, আর লতা ও একই রকম আগ্রহী। আর উৎসাহে আগুন লাগাবার জন্য প্রদীপের জুড়ি নেই। কোনও রকমে একটা চায়ের দোকান পেতে ব্যপার টা থামানো গেল। অনেকক্ষণ গাড়িতে বসে থাকার পর একটু হাত, পা চালানোর সুযোগ পেয়ে সকলেই relaxed, তাই যথারীতি আবার দেরি হয়ে গেল। ঝোরথাং থেকে আমরা রওনা দিলাম প্রায় বিকেল পাঁচটা নাগাদ। আরও কমপক্ষে দেড় ঘণ্টার journey বাকি। Mandarin Village Resort এর ছবি website এ অনেকবার দেখেছি কিন্তু যখন রাত ৭ টার সময় পৌঁছলাম, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া, মিঃ লিম্বুর উষ্ণ অভ্যর্থনা আর সর্বপরি সামনে বিশাল কালো পাহাড় জুড়ে অসংখ্য বাতির মতো আলোর খেলা দেখে ক্লান্তি মুহূর্তে উধাও। সকলেই নিজেদের ঘর দেখে যারপরনাই খুশি। আমি আর প্রদীপ সপরিবারে ছিলাম একটা Suit Room এ। অসাধারন ব্যবস্থা। দুটি সুসজ্জিত ঘর – একটি একটু বেশি বড় এবং attached bathroom সহ, আর একটি তুলনামুলক ছোট। তার সঙ্গে একটি common bathroom, একটি রান্নাঘর, খাবার জায়গা, Fireplace সহ বসার জায়গা। আর সবচাইতে মুল্যবান – একটি ছোট ছাতের মতো attached balcony যেখান থেকে পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা সোজা দেখা যায়। অবশ্য পরে দিনের বেলা বুঝলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এই রিসোর্টের সব জায়গা থেকেই সুন্দর ভাবে দেখা যায়।