April 8, 2025

শিক্ষক দিবস

জহর চট্টোপাধ্যায় : বিশ্বব্যাপী ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস পালিত হলেও,  গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে ৫ সেপ্টেম্বর তারিখটি শিক্ষক দিবস হিসাবে পালিত হয় । স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ড: সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন উপলক্ষে এই দিনটিকেই শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।  ড: রাধাকৃষ্ণণ ছিলেন একজন সুদক্ষ দার্শনিক, দক্ষ  রাজনীতিবিদ এবং তারও উপরে একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবেই তাঁর সর্বাধিক পরিচয় । শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অগাধ ভালবাসা তাঁকে বারবার টেনে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি সবসময় অগাধ ভালবাসা পেয়েছেন। ১৯৬২ সালে ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। শোনা যায়, ডঃ রাধাকৃষ্ণণের কয়েকজন ছাত্র, বন্ধুবান্ধব মিলে তাঁর  জন্মদিনটি বিশেষভাবে পালন করতে চেয়েছিলেন। তাদের সেই অনুরোধের উত্তরে ডঃ রাধাকৃষ্ণণ জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্মদিন আলাদাভাবে পালন না করে সেই দিনটি দেশের সব শিক্ষকের জন্য পালন করা হলে তিনি গর্ববোধ করবেন। নিজের জন্মদিন পালনের এই আবেদন শিক্ষকদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও সম্মানকেই প্রকাশ করে। তাই ১৯৬২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ডঃ রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই শিক্ষক হওয়া উচিত। আমরা সবাই ছোটবেলা থেকেই শিক্ষকের প্রতি এক অগাধ সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিয়েই পথ চলতে শুরু করি। কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল, কোনটি উচিৎ আর কোনটি উচিৎ নয়, জীবনের কোণ পরিস্থিতিতে আমাদের কি কর্তব্য তার শিক্ষা দিয়েই আমাদের বাঁচতে শেখান শিক্ষকেরা। আজ শিক্ষক দিবসে তাঁদের শ্রদ্ধা জানতে, উপযুক্ত মর্যাদা দান করতে কবি কাদের নওয়াজ-এর লেখা কবিতার অর্ঘ্য দিয়ে আমরা শ্রদ্ধাবনত চিত্তে প্রণাম জানাই।

 

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা
কবি কাদের নওয়াজ

বাদশাহ আলমগীর
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ, শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।

তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ‘শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা’
শিক্ষক কন, ‘জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?’
বাদশাহ্ কহেন, ‘সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।’

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে,
‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *